Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

ভাদ্র ২৩ ১৪৩১, রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চলে গেলেন বরেণ্য লেখক  হোসেনউদ্দিন হোসেন 

কাজী রকিবুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:০৬, ২০ মে ২০২৪

আপডেট: ২২:০৭, ২০ মে ২০২৪

প্রিন্ট:

চলে গেলেন বরেণ্য লেখক  হোসেনউদ্দিন হোসেন 

-হোসেনউদ্দিন হোসেন, ২০১৮ সালে অক্টোবরে বহুমাত্রিক.কম’র প্রতিনিধি দলকে ঝিরগাছাার কাটাখালের পাড়ে একটি ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখাচ্ছেন।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও গবেষক, বীরমুক্তিযোদ্ধা হোসেনউদ্দিন হোসেন আর নেই। সোমবার বিকেল ৪টা ৪ মিনিটে তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। (ইন্না...রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। 

হোসেনউদ্দিন হোসেনের ছোট মেয়ে শাহানাজ রাহানা রত্না জানান, ২০১৯ সালে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। পরবর্তীতে গল ব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। এ ছাড়াও তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত ১৪ মে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিন তাকে যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সিএমইচে স্থানান্তর করা হয়। সিটিস্ক্যান রিপোর্টে বাবার ব্রেইন ড্যামেজ ধরা পড়েছিল। এ ছাড়া তাঁর ফুসফুসে পানি জমে। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাঁর চিকিৎসা চলা অবস্থায় সোমবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই প্রখ্যাত সাহিত্যক।

কলিম উদ্দিন-আছিরন নেসার সন্তান হোসেনউদ্দীন হোসেন ১৯৪১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পৌর শহরের কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ‘সাহিত্য ভবন’ নামে বাড়িতে সহধর্মিণী হাসিনা আক্তারকে নিয়ে বসবাস করতেন। তাঁর ৪ সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। 

নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর ঝিকরগাছা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৯ সালে সম্পন্ন করেন উচ্চ মাধ্যমিক। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম কবিতা কলকাতার দৈনিক পত্রিকা লোকসেবকে প্রকাশিত হয়।  পরবর্তীতে তার বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ঢাকা ও কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হওয়া শুরু করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

২০২১ সালে বাংলা একাডেমি পুরষ্কারে ভুষিত হন। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। হোসেন উদ্দীন হোসেনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি। এগুলো হলো যশোরাদ্যদেশ (১৯৭৪), যশোর জেলার কিংবদন্তী (১৯৭৪)- ১ম খন্ড, যশোর জেলার কিংবদন্তী (১৯৭৯)- ২য় খন্ড, অমৃত বৈদেশিক (১৯৭৫), ভলতেয়ার ফবেয়ার কলসত্ব ত্রয়ী উপন্যাস ও যুগমানস (১৯৮৮), ঐতিহ্য আধুনিকতা ও আহসান হাবীব (১৯৯৪), বাংলার বিদ্রোহ (২০০৩) ১ম খন্ড, বাংলার বিদ্রোহ (২০০৬) ২য় খন্ড, নষ্ট মানুষ উপন্যাস (১৯৭৪), প্লাবন এবং একজন উপন্যাস (১৯৭৯), সাধুহাটির লোকজন উপন্যাস (২০০১), ইঁদুর ও মানুষেরা উপন্যাস (২০০৮), সোনালি জলের কাঁকড়া উপন্যাস (২০১১), FLOOD AND A NOOH উপন্যাস (২০০৫), সমাজ সাহিত্য দর্শন প্রবন্ধ (২০১০), রণেত্র সারাবেলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি (২০১২), লোকলোকোত্তর গাঁথা কিংবদন্তী (২০১২), উনাশির শ্রেষ্ঠ গল্প সম্পাদনা (১৯৭৯) এবং মরাল সম্পাদনা (২০০৮ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে)।

সম্মাননা ও সাহিত্য পুরস্কার: লেখালেখিতে হোসেন উদ্দীন হোসেনের ঝুঁলিতে জমেছে অনেক পদক। চাঁদের হাট পদক-১৯৯০, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্মৃতি পদক-১৯৯৬, বিজয় দিবস পদক-১৯৯৭, মাইকেল মধুসূদন একাডেমী পদক-২০০১, কোলকাতা বিধান নগর (সল্টলেক) মেলা পদক-২০০৪, কন্ঠশীলন সম্মাননা পদক-২০০৬, গুনীজন সম্মাননা পদক- ২০০৬, এম,এল হাই স্কুল সম্মাননা পদক-২০০৬, ক্যামব্রিজ স্বর্ণপদক (ইংল্যান্ড)- ২০০৬, কপোতাক্ষ সম্মাননা পদক-২০০৭, আয়েশা জব্বার সম্মাননা পদক-২০০৭, বিবর্তন আজীবন সম্মাননা পদক-(ঢাকা) ২০১০, বইমেলা সম্মাননা পদক-(যশোর ইনস্টিটিউট) ২০১০, বইমেলা সম্মাননা পদক- (মণিরামপুর) ২০০৮, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সম্মাননা পদক- ২০১০, শিমুল পলাশ সম্মাননা পদক- (কলকাতা) ২০০৩, লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা পদক- (কলকাতা) ২০০৩। ২০০৬ সালে হোসেনউদ্দীন হোসেনকে ক্যামব্রিজ, ইংল্যান্ড থেকে ঞড়ঢ়-১০০ ৎিরঃবৎং হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। কোলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালে বাংলা বিভাগে হোসেনউদ্দীন হোসেনের ইঁদুর ও মানুষেরা উপন্যাসটি এমএ ক্লাসে পড়ানো হয়। 

হোসেন উদ্দীন হোসেন ৬০ দশকে সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করেন। দৈনিক সংবাদে কিছুকাল কাজ করেন। এক বছর পর এই পেশা থেকে সরে সাহিত্য সেবায় যুক্ত হন। তিনি ১৯৬৮ সালে যশোর থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক নতুন দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। এই পত্রিকাটি ১৯৭১ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল।

সরেজমিন ঝিকরগাছা : শিউরে উঠা আজাদ হিন্দের রক্তাক্ত ইতিহাস

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer