রাজধানী ঢাকাতে এখন থেকে আর ব্যক্তি পর্যায়ে ৮ তলার ওপর ভবন নির্মাণ করা যাবে না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নতুন অঞ্চল পরিকল্পনায় (ডিটেইল এরিয়া প্লান বা ড্যাপ) এই প্রস্তাব করা হয়েছে। আসছে ডিসেম্বরে এটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন ড্যাপের মেয়াদ হবে ২০ বছর।
ধানমন্ডিতে এতোদিন সর্বোচ্চ ১৪ তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যেত। তবে এখন থেকে তা আর নির্মাণ করা যাবে না। শুধু ধানমন্ডি নয়, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ঢাকা শহরের সব এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে এই প্রস্তাবটি। আর রাজউকের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকায় আবাসিক ভবন হবে সর্বোচ্চ ৬ তলা।
রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা শহরের স্বার্থেই এই প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমবে ও নাগরিক সেবার মান বাড়বে।
নতুন ড্যাপের বিভিন্ন দিক নিয়ে অংশীজনদের মতামত নিচ্ছে রাজউক। অনলাইনে রাজউকের ওয়েবসাইটে ও সরাসরি রাজউক কার্যালয়ে গিয়ে মতামত দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
গত ২ সেপ্টেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন ড্যাপের খসড়া আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে জনঘনত্ব অনুযায়ী ভবনের এমন উচ্চতা নির্ধারণের পাশাপাশি জরিমানা দিয়ে অনুমোদনহীন ভবন বৈধ করা, ভূমির পুনরুন্নয়ন, ভূমি পুনর্বিন্যাস, উন্নয়ন স্বত্ব প্রতিস্থাপন পন্থা (জলাশয় রক্ষাসংক্রান্ত পরিকল্পনা), ট্রানজিটভিত্তিক (পরিবহনের স্টেশন) উন্নয়নসহ বেশ কিছু নতুন কর্মকৌশল যুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো আগের কোনো পরিকল্পনায় ছিল না।
জনঘনত্ব অনুযায়ী ভবনের উচ্চতা:
রাজধানীতে এখন ভবন নির্মাণ করা হয় ২০১০ সালের ড্যাপ ও ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে। ২০০৮ সালে করা এই বিধিমালায় জমির আয়তন অনুযায়ী কত তলা বা উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে তা উল্লেখ আছে। এই বিধিমালার কারণে বেশি উচ্চতার আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়। যেমন, এর আগের বিধিমালায় (১৯৯৬ সালের) ধানমন্ডিতে যে জমিতে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা যেত, ২০০৮ সালের বিধিমালায় সেই জমিতে ১৪ তলা ভবন হচ্ছে।
নতুন ড্যাপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজউকের অন্তর্ভুক্ত ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মোট ৪৬৮টি (ব্লক) ভাগ করা হয়েছে। পরে জরিপ করে প্রতিটি ব্লকের জনসংখ্যার ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধা এবং সেখানে উন্নয়নের ধরনের ওপর ভিত্তি করে আবাসিক ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে। যে ব্লকে নাগরিক সুবিধা ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক ভালো, উন্মুক্ত স্থান বেশি, সেই ব্লকের ভবনের উচ্চতা বেশি ধরা হয়েছে। আর যেখানে বিপরীত চিত্র পাওয়া গেছে, সেখানে ভবনের উচ্চতা কম ধরা হয়েছে।
এই হিসাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের খিলক্ষেত, কুড়িল, নিকুঞ্জ এলাকায় ৬ তলা; উত্তরায় ৭-৮ তলা; গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকা ৬-৮ তলা; মিরপুর এলাকায় ৪-৭ তলা; মোহাম্মদপুর-লালমাটিয়া এলাকায় ৫-৮ তলা উচ্চতার আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে।
অন্যদিকে গাজীপুরের দু-একটি এলাকা ছাড়া বেশির ভাগ এলাকারই আবাসিক ভবনের সর্বোচ্চ উচ্চতা হবে ৪-৬ তলা। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পুরান ঢাকায় ৪-৬ তলা উচ্চতার আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে।
তবে যেসব ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেছে বা ভবন নির্মাণের অনুমোদন ইতিমধ্যে নেওয়া হয়ে গেছে বা নতুন ড্যাপ চূড়ান্ত হওয়ার আগে নির্মাণ অনুমোদন নেওয়া হবে সে ক্ষেত্রে উচ্চতার এই বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না।
ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে এর আগে ২০১০ সালে প্রথম ড্যাপ পাস করে সরকার। কিন্তু ড্যাপ পাসের পর আবাসন ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীদের চাপে এটি চূড়ান্ত করতে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয় সরকার। এই কমিটি গত ১০ বছরেও ড্যাপ চূড়ান্ত না করে উল্টো ড্যাপে দুই শতাধিক সংশোধনী আনে। এসব সংশোধনীর মাধ্যমে কার্যত জলাভূমি ভরাটের বৈধতা দেওয়া হয়। প্রথম ড্যাপের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত। পরে অরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন বলা হচ্ছে নতুন ড্যাপ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের ড্যাপ কার্যকর থাকবে।