Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

পৌষ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ফের ক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা: ৬০৪ দিনের পূর্ণ বকেয়া মজুরি প্রদানের দাবি

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১০, ৭ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ০১:২৩, ৭ মার্চ ২০২৩

প্রিন্ট:

ফের ক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা: ৬০৪ দিনের পূর্ণ বকেয়া মজুরি প্রদানের দাবি

ছবি- বহুমাত্রিক.কম

এবার বকেয়া মজুরির দাবিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন চা শ্রমিকরা। মজুরি নির্ধারণের প্রথা অনুযায়ী বিগত ৬০৪ দিনের দৈনিক ৫০ টাকা হিসেবে ৩০ হাজার ২শ’ টাকা একজন চা-শ্রমিকের পূর্ণ বকেয়া প্রদানের দাবি জানিয়েছে চা শ্রমিকরা। পূর্ণ বকেয়া প্রদান করা না হলে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণারও হুমকি প্রদান করা হয়।

সোমবার সকাল ৮টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের তিন বাগানের চা শ্রমিকরা জড়ো হয়ে আলীনগর চা বাগান কারখানার সম্মুখে বিক্ষোভ করে পূর্ণ বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান।

বিক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা জানান, ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত বছরের আগষ্ট মাসে চা শ্রমিকরা দীর্ঘ ১৯ দিনের লাগাতার কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ, রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করেন চা শ্রমিকরা। পরে ১২০ টাকা থেকে দৈনিক ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

নির্ধারিত সময়ের ২০ মাস পর ২০২১-২২ মেয়াদের জন্য ১৭০ টাকা মজুরি গত বছরের ২৯ আগষ্ট থেকে কার্যকর করা হলেও বকেয়া মজুরির এরিয়ার প্রদান করা হয়নি। তবে গত ১ মার্চ শ্রম অধিদপ্তরের এক পরিপত্রে মাধ্যমে জানানো হয় ঢাকায় শ্রম অধিদপ্তরে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বকেয়া এরিয়ার থোক বরাদ্দ হিসেবে জনপ্রতি ১১ হাজার টাকা করে ৩ দফায় প্রদান করা হবে। অথচ ৬০৪ দিনের জন্য দৈনিক ৫০ টাকা হিসেবে ৩০ হাজার ২০০ টাকা একজন চা-শ্রমিকের ন্যায্য বকেয়া এরিয়ার পাওয়ার কথা। সেখানে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মোটেও কাম্য নয় বলে শ্রমিকরা দাবি তুলেন।

এসব বিষয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের দালাল আখ্যায়িত করে সাধারণ চা শ্রমিকরা ১১ হাজার টাকা প্রাপ্তির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে আন্দোলনের হুমকি প্রদান করছেন। সোমবার সকাল ৮টায় আলীনগর, সুনছড়া, কামারছড়া চা বাগান শ্রমিকরা আলীনগর চা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। আলীনগর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি গণেশ পাত্রের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাগান পঞ্চায়েত সম্পাদক চন্দন বাকতি, সুনছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত সম্পাদক প্রশান্ত কৈরী, কামারছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত সম্পাদক দিলিপ কৈরী, আলীনগর ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য গৌরি রানী, শ্রমিক নেতা দয়াশংকর কৈরী, সীতারাম বীন, রামবিজিত কৈরী, সুনীল মৃধা প্রমুখ।

শ্রমিক নেতারা বলেন, আমাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ৫০ টাকা হারে ৬০৪ দিনের বকেয়া ৩০ হাজার ২শত টাকা প্রদান করতে হবে। সরকার শ্রমিক নেতা ও মালিকপক্ষ আমাদের ন্যায্য পাওনা মাথাপিছু হারে ১৯ হাজার টাকা থেকে বঞ্চিত করছে। এটি মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। আমাদের পূর্ণাঙ্গ বকেয়া পরিশোধ করা না হলে পরবর্তীতে আবারো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং প্রয়োজনে শ্রমিকরা আবারো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। 

চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা জানান, ২০২১ সালে জানুয়ারি হতে ২০২২ সালের আগষ্ট পর্যন্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডেরও জনপ্রতি প্রায় ২৩০০ টাকা প্রদানের দায় থেকেও মালিকদের মুক্তি দেওয়া হয়। এভাবে মালিকদের স্বার্থরক্ষায় সরকার, মালিক ও দালাল নেতারা সমন্বিত হয়ে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখলেও ১৭০ টাকা মজুরি মেয়াদ ২০২২ সালে উত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে ২ মাস অতিক্রান্ত হলেও কবে নতুন মজুরি কার্যকর হবে সে ব্যাপারে কেউ ‘টু’ শব্দটি করছে না। 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিপেন পালের মোবাইলে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালেন্দি বলেন, ঢাকায় সমঝোতা বৈঠকে আমরা ছিলাম না। শ্রম প্রতিমন্ত্রী আমাদের ডেকে নিয়ে জানতে চাইলে আমরা বকেয়া ৫০ টাকা হিসাবে শ্রমিকদের ৩০ হাজার ২শ’ টাকা প্রদানের দাবি জানিয়েছি। পরে সরকার ১১ হাজার ২শ’ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং অনেক বাগানের শ্রমিকরা সেই হারে টাকাও নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ১৭০ টাকা মজুরিও সরকার নির্ধারণ করেছে। 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer