-খরায় শুকিয়ে যাওয়া মাঠ। ছবি: বহুমাত্রিক.কম
চলতি মওসুমে আউশ ক্ষেত এখন গজিয়ে ওঠার সময়। তবে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে মাঠঘাট শুকিয়ে জমিজমা চৌচির হয়ে গেছে। ফলে মৌলভীবাজারের কৃষকরা আউশের চাষাবাদ বঞ্চিত হচ্ছেন! বোরো মওসুমেও অনেকেই চিটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছেন। প্রকৃতিতে দাবদাহে আউশের বীজতলাও পুড়ে ছারখার হচ্ছে। কৃষকের অনেকেই এক পশলা বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলায় ৬৬ হাজার ৯২৩ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনাবৃষ্টি ও পানির অভাবে কৃষকেরা বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। বীজতলা তৈরি করতে বিলম্ব হওয়ায় চারা রোপন করতেও বিলম্ব হবে।
বৃষ্টিপাতের অভাবে কৃষকরা জমি তৈরি করতে পারছেন না। যারা বোরো বীজতলা তৈরি করেছেন তাদের কারো কারো বীজতলাও বিনষ্ট হতে চলেছে। সেচ দিয়ে জমিতে কোন মতে হাল চাষাবাদ করার পরদিন আবার জমি শুকিয়ে চৌচির হচ্ছে। গ্রীষ্ম ও আউশ মৌসুমের শেষ লগ্নেও বৃষ্টিপাতের অভাবে কৃষকরা চাষাবাদ বঞ্চিত হচ্ছেন। এক পশলা বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করছেন কেউ কেউ।
কমলগঞ্জের পতনউষারের কৃষক, সমাজকর্মী ও ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান বলেন, গ্রীষ্মের এই সময়ে বোরো ধান তোলার পর আউশ ক্ষেত সবুজে ভরপুর হয়ে ওঠার কথা। সেচ ও বালাইনাশক ছাড়াই বৃষ্টির পানিতে এবং সামান্য পরিচর্যা আর অল্প সারে এ ধান কৃষকের ঘরে ওঠে। তবে জ্যৈষ্ঠের শেষ পর্যায়েও বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। আবহাওয়র বৈরিতা খাঁ খাঁ করছে আউশের আবাদি জমিগুলো। সেচের মাধ্যমে কেউ কেউ বীজতলা তৈরি করেন। আবার কেউ কেউ বৃষ্টির অপেক্ষায় শুষ্ক জমি নিয়ে অপেক্ষার সময়টুকুও হারিয়ে ফেলছেন। আউশের আশাটুকুও হাতছাড়া হতে চলেছে অনেকের।
কৃষক আক্তার মিয়া, মানিক মিয়া, শওকত আলী বলেন, গত মৌসুমে বোরো ধানের জমিতে চিটায় ধানক্ষেত পুড়ে গেছে। অধিক উৎপাদন খরচ হয়েছে। এখন খরার কবলে পড়ে আবার আউশ ক্ষেত ব্যাহত হয়েছে। আমরা সাধারণ কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির কথা কেউ বলেন না। তারা আরো বলেন, একদিকে সকল জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ধান গাছে চিটা, ছত্রাক, পোকার আক্রমণ, বন্যা, খরাসহ নানা প্রতিকূলতা আমাদের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
কৃষক মো. আলী বলেন, ‘আমি প্রতি বছর আউশ ও আমন ধান চাষ করি। ৩ একর জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছি। পানির অভাবে আউশ ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারিনি। কিছু বীজতলা তৈরি করে ছিলাম এগুলো আবার গরম ও পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ কমলগঞ্জের কৃষক জহুর মিয়া বলেন, ‘তীব্র গরমে বোরো ধানও ভালো হয়নি আমার। এখন আউশ আবাদও বিলম্ব হচ্ছে। পুকুরেও পানি নেই। সেচের ব্যবস্থা থাকলে অন্তত বীজতলা তৈরি করতে পারতাম।’
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় আউশ ধান চাষে বিলম্বিত হতে পারে। সঠিক সময়ে চারাগাছ রোপণ না করলে ফলন কম হতে পারে। সময়মতো বৃষ্টি হলে জ্যেষ্ঠ মাসের প্রথমদিক থেকে চারা রোপণে নেমে পড়তেন কৃষকেরা।