ছবি: বহুমাত্রিক.কম
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে সোহাগী বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। রোববার রাত সাড়ে আটটায় উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পার্শ্বে ছবদুলপাড়া গ্রামে নিজ শয়ন কক্ষ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা দাবী করছেন তাকে হত্যা করে গলায় ওরনা দিয়ে ঝুলে রাখা হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের পলাশ হোসেনের স্ত্রী।
থানা পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেলে স্বামীর বাড়িতে শয়ন কক্ষে সোহাগীর ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় বাড়ির লোকজন। পরে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নেয়। তার স্বামী পেশায় একজন কৃষক। কয়েক বছর ধরে পলাশ নেশায় আসক্ত ছিল। প্রায় দশ বছর পূর্বে পলাশের সঙ্গে নওগাঁ সদর উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামের লাল মিয়ার মেয়ে সোহাগী বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে নানাবিধ সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময় ঝগরা বিবাদ লেগে থাকত। তাদের নয় বছরের একটি মেয়ে ও তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
নিহত গৃহবধূ সোহাগী বেগমের ভাই সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমার বোনের স্বামী একজন মাদকাসক্ত। সে নেশা করে এসে প্রায়ই সোহাগীকে মারধর করতো। আমার বিশ্বাস আমার বোন কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলে রাখা হয়েছে’। নিহতের নয় বছর বয়সী মেয়ে রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমি স্কুলে ছিলাম। স্কুল থেকে এসে দেখি আমার মা গলায় দড়ি দিয়ে মরে আছে’।
গৃহবধুর স্বামী পলাশ হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলেকে শাসন করা নিয়ে আমার স্ত্রী সোহাগীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়। তাকে কোনভাবে মারিনি এবং তেমন কিছু করিনি। তার পর থেকে সে আমার সাথে কোন কথা বলেনি। রবিবার সকালে উঠে রান্নাও সে করেছে। দুপুরে আমি তিলকপুর বাজারে চাল বিক্রয় করতে গিয়ে শুনতে পাই সে বাড়িতে আত্মহত্যা করেছে’।
পলাশের বাবা কামাল হোসেন বলেন, ‘রবিবার দুপুরে আমরা বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। তার মেয়ে রহিমা খাতুন স্কুল থেকে বাসায় এসে ঘরে ঢুকে ঝুলানো অবস্থায় তার মাকে দেখে চিৎকার করে। তাদের ছেলেকে শাসন করা নিয়ে তর্ক বিতর্ক হওয়াই সে আত্মহত্যা করেছে’।
তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম মাহবুব সজল বলেন, ‘পলাশ তাঁর স্ত্রীকে মারপিট করতেন বলে স্ত্রীর স্বজনেরা জানিয়েছেন। মারধরের কারণে একাধিকবার দরবার-সালিস হয়েছে। রোববার বিকেলে আমার ইউপি সদস্য বাদশা আলমের মাধ্যমে জানতে পারলাম স্বামীর বাড়ির শয়ন কক্ষে সোহাগী বেগমের গলায় ফাঁস দেওয়া লাশ রয়েছে। পরে থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে রাতেই লাশটি উদ্ধার করে’।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দীক বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়েছি। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহটি মর্গে পাঠানো হবে। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।