ছবি: বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজারের হোটেল শ্রমিক তানিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং কর্মক্ষেত্রে সকল শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিন মিয়ার নেতৃত্বে শহরের চৌমুহনা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের কাছে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। যার অনুলিপি পুলিশের আইজিপি, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে জানানো হয়, গত ২৫ জুন মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ এলাকার খানদানী রেস্টুরেন্টের কিশোর শ্রমিক তানিম কতিপয় দুস্কৃতিকারীর হাতে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে। মাত্র ১৪-১৫ বছরের এমন ফুটফুটে কিশোরের মৃত্যুতে সমস্ত হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের সার্বিক নিরাপত্তা এবং তানিমের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ প্রদানের দাবি জানায়। কিন্তু ঘটনার ১৫ দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও অদ্যাবধি হত্যাকারী সকল অপরাধীকে গ্রেফতারের করা হয়নি।
হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা জানান, পরিবারের অভাব অনটনের কারণে কিশোর তানিম এক মাস আগে শহরের খানদানী রেষ্টুরেন্টে কাজ নেয়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে গত ২৪ জুন খানদানী রেষ্টুরেন্টের সামনের পানদোকানদার কয়েকজনের সহযোগিতায় নির্মমভাবে অত্যাচার করে তানিমের মাথায় ও অন্ডকোষে গুরুতর জখম করে। পরবর্তীতে মুমূর্ষ তানিমকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার শুরু থেকে খানদানী রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্ঠা করে। এমন কি মৃত্যু পথযাত্রী তানিমকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না। হোটেল কর্তৃপক্ষের এহেন আচরণের কারণ কি হতে পারে? মৌলভীবাজার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও তানিমের অবস্থার উন্নতি না হয়ে আরও অবনতি হতে থাকে। পরদিন ২৫ জুন সকালে মৃত্যু পথযাত্রী তানিম সদর হাসপাতালের তাঁর পাশের সিটের রোগীর মোবাইলে তার পিতাকে জানালে পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ছুটে আসেন। তানিমের পিতাসহ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে এসে তানিমের গুরুতর অবস্থা দেখে তাঁকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। গুরুতর অবস্থায় এম্বুলেন্সেই তানিম তাঁর পিতার সাথে শেষ কথা বলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, দুপুরে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তানিমকে মৃত ঘোষণা করেন।
কল সিসি ক্যামেরার ফুটেছ পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়নি বলে তানিমের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ শ্রমআইনের ৪১ ধারায় দৈনিক ৫ ঘন্টার অধিক এবং সন্ধ্যা ৭ টা থেকে সকাল ৭ টায় পর্যন্ত কিশোর শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো নিধিদ্ধ হলেও খানদানী রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ কি তার যথাযথ প্রতিপালন করেছিলেন? কিশোর শ্রমিক নিয়োগ এবং তার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় দায়িত্ব কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হলেও তারা কি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন? তানিমের মৃত্যু সেই প্রশ্নগুলোকে খুবই প্রাসঙ্গিকভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। আগামীতে যে আর কোন তানিমকে এভাবে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যু বা হত্যার স্বীকার হতে হবে না তার নিশ্চয়তা কি দেওয়া হবে?
তানিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে খানদানী রেস্টুরেন্টের কর্তৃপক্ষসহ ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডে যাদের নাম এসেছে তাদের সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তানিমের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ প্রদান করার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সকল শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম স্মারকলিপি গ্রহণের সত্যতা নিশ্চিত করেন।