ছবি: সংগৃহীত
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা মিলছে না। দিন-রাত নদীতে জাল ফেলেও মাছ না পেয়ে জেলেরা হতাশ। জাল ফেলে তারা যেটুকু পরিমাণ মাছ পাচ্ছেন, তাতে লাভ দূরে থাক, নৌকার তেলের খরচই উঠছে না। গত মার্চ-এপ্রিল দু’মাস জাটকা সংরক্ষণ অভিযান শেষে মহাজনের দাদনের টাকা কাঁধে নিয়ে ১ মে থেকে নদীতে নামে জেলেরা। মৌসুম শুরু হলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এতে জেলার অর্ধ-লক্ষাধিক জেলে আর্থিক সংকটে পড়েছে।মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলছেন, শিগগিরই জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়বে। চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় সর্বমোট ৫১ হাজার ১৮৯ জন জেলে রয়েছে।
জেলে জামাল দেওয়ান ও ফজলু বেপারী বলেন, বুক ভরা আশা নিয়ে নদীতে নেমেছি কিন্তু নদীতে মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছি। ভরা মৌসুম শুরু হলেও চাঁদপুরের নদীগুলো ইলিশ শূন্য। পদ্মা-মেঘনায় দিন-রাত জাল ফেলেও আমরা ইলিশের নাগাল পাচ্ছি না। অধিকাংশ সময়ই শূন্য হাতে জাল-নৌকা নিয়ে ফিরে আসতে হয়। জালে যে পরিমাণ ইলিশ ধরা পরে, তাতে নৌকার তেলের খরচ উঠে আসছে না। আমরা এখনও নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা পাচ্ছি না।
ক্রেতা মাহবুবুর রহমান ও মিল্লাত হোসেন বলেন, ভরা মৌসুমে ইলিশের সংকট ও দাম অসহনীয় থাকায় তারা হতাশা ব্যক্ত করেন। বাজারে এসে দেখছি ইলিশের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মাছ না কিনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি, দাম কমলে তখন কিনবো। এখন ৪০০ গ্রাম সাইজের ইলিশই ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাঁদপুর ইলিশের শহর হলেও আমরা ইলিশের নাগাল পাচ্ছি না।
আড়তদার হাজী আ. মালেক খন্দকার ও শামীম জমাদার জানান, জেলেদের জালে ইলিশ না ধরা পড়ায় আড়তগুলো মাছ শূন্য। ভরা মৌসুমে আড়তে ইলিশ না আসায় আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। অন্যান্য বছর এই সময় স্থানীয় নদী ও বরিশালের অনেক মাছ আসতো। তখন ভাত খাওয়ার সময় পর্যন্ত পেতাম না। এবার আড়তে মাছ না থাকায় আমরা গল্প-গুজব করে সময় পার করছি। বর্তমানে এক কেজি সাইজের ইলিশ ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা এবং ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ৪০০ থেকে ৫০০ মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। অথচ গত বছর এই সময়ে ঘাটে দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার মণ ইলিশের আমদানি হতো।
ইলিশ গবেষক ও চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, এবছর এপ্রিল মাসে আগাম বৃষ্টির ফলে জাটকা ইলিশ সমুদ্রে সরে গেছে। বৃষ্টিপাত ও নদীর স্রোত বৃদ্ধি পেলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে ইলিশের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করছি।