Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

পৌষ ১৯ ১৪৩১, শুক্রবার ০৩ জানুয়ারি ২০২৫

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতির বাসায় র‍্যাব-দুদকের ‘রহস্যময় অভিযান’

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রিন্ট:

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতির বাসায় র‍্যাব-দুদকের ‘রহস্যময় অভিযান’

ছবি- সংগৃহীত

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলমের চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসায় অভিযান চালিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আবাসিকের ১৭৫/১৭৬ নম্বর জামিলাস কটেজ নামে বাসাটিতে অভিযান শুরু করে র‍্যাব কর্মকর্তারা।

রাত ৩টার দিকে শেষ হয় এই অভিযান। গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এতো বড় অভিযানের বিষয়টি জানানো হয়নি।

বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের পার্শ্ববর্তী এ বাসাটিতে অভিযানকালে দুদকের একাধিক টিমকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। যদিও ঘটনাস্থলে স্থানীয় থানা পুলিশের কাউকে দেখা যায়নি।

গোয়েন্দা তথ্য ছিল, চট্টগ্রামের অন্যতম শিল্পপতি মাহবুবুলের বাসাটিতে বিপুল সংখ্যক বৈদেশিক এবং দেশীয় মুদ্রা মজুত রয়েছে। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বানচাল করতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের তত্ত্বাবধানে এগুলো মজুত করা হয়েছিল। যদিও প্রায় ৩ ঘণ্টা অভিযান শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাসাটিতে ওইরকম কিছুই পাওয়া যায়নি। যদিও নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৩ ঘণ্টার অভিযান নিষ্ফল হওয়ায় নানান প্রশ্নের উদ্রেক দেখা দিয়েছে।

পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা এবং টাকা মজুত থাকার গোয়েন্দা তথ্য তাদের কাছেও ছিল। তবে বিষয়টি সন্দেহজনক, পর্যাপ্ত ফোর্স না থাকা এবং অভিযান নিয়ে পরে বিতর্ক হতে পারে এ আশঙ্কায় তারা অভিযান পরিচালনা করেননি।

এদিকে পুরো অভিযানের সময় বিপুল সংখ্যক র‍্যাব ও দুদকের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বাসাটির ভেতরে প্রবেশ করেন কয়েকজন কর্মকর্তা। বাইরে থেকে র‍্যাবের ফোর্স বাসাটি ঘিরে রাখেন। অভিযানকালে তিনজন গণমাধ্যমকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ সময় তারা বাসাটিতে প্রবেশ করতে চাইলে র‍্যাব কর্মকর্তারা বাঁধা দেন। তারা জানান, অভিযান চলাকালে ভেতরে প্রবেশ করতে কাউকে দেয়া হবে না। অভিযান শেষে বিস্তারিত ব্রিফিং করা হবে। রাত ৩টার দিকে যখন অভিযান শেষ তখন র‍্যাব ও দুদকের একাধিক কর্মকর্তাকে অভিযানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তারা অভিযানে তেমন কিছু পায়নি উল্লেখ করে গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহবুবুল আলম। চট্টগ্রামের বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এ ব্যবসায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিপুল টাকা খরচ করেন। সবশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ও শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা মাহবুবুল টাকাগুলো মজুত করেছিলেন। আন্দোলন বানচালে তারা বিপুল সংখ্যক টাকা খরচও করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একটি সূত্রের তথ্যমতে, অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা মূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা মজুত ছিল বাসাটিতে। কয়েকদিন ধরে দুদক, পুলিশ ও র‍্যাব অভিযানের বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। অভিযানের আগে কয়েকদিন ধরে একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা বাসাটি নজরদারিতে রেখেছিলেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হলে এরপর থেকে পালিয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ী মাহবুবুল। অভিযানের পর রাত ৪টার দিকে তাকে মোবাইল ফোনে কল করা হয়। অপরপ্রান্তে কলটি রিসিভ করেন একজন নারী। তিনি নিজেকে মাহবুবুলের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে তারা বাসাটিতে থাকেন না। বর্তমানে তাদের মেয়ে এবং মেয়ের স্বামীসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয় বাসাটিতে রয়েছেন। বাসায় তেমন কিছু নেই। দুদক ও র‍্যাব টাকা মজুতের তথ্য পেয়ে আসছিল। কিন্তু কিছু পাওয়া না যাওয়ায় অভিযান শেষে তারা হাসিমুখে ফিরে গেছেন।

এদিকে সরেজমিনে রাত ৩টার দিকে অভিযানের পরপরই বাসাটির গেটের সামনে এক নারী ও দুজন পুরুষ এবং একজন সিকিউরিটি গার্ডকে দেখা যায়। গণমাধ্যমকর্মী জেনে তারা কেউ নিজেদের পরিচয় দেননি। এ ছাড়া অভিযানের বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করেননি। শুধু একজন পুরুষ বলেন, 'আপনারা তো দেখেছেন বাসাটিতে কিছু পাওয়া যায়নি।'

তবে গলিতে থাকা কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড বলেন, যে বাসাটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সেটির পেছনেও দরজা রয়েছে। যেখান দিয়ে টাকা সরানোর সুযোগ রয়েছে। এরকম কিছু দেখেছেন কি-না জানতে চাইলে তারা বলেন, অভিযানে থাকা র‍্যাব ও দুদকের কর্মকর্তারা তাদের বাসাটির পেছনের দিকে যেতে দেননি।

আরো পড়ুন: ২৫ ক্যাডার নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, সিনিয়র সহকারী সচিব বরখাস্ত

এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ডিউটি অফিসার পলাশ কুমার হাজারী বলেন, অভিযানের বিষয়ে আমরা অবহিত নই। এ বিষয়ে কোনো সংস্থা থেকে স্যারদের জানানো হলে আমি জানব না। তবে আমাদের কোনো টিম অভিযানে যায়নি।

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, অভিযানের বিষয়ে আমাদেরকে জানানো হয়নি। তবে আমাদের জানাতে হবে বিষয়টি দরকারিও নয়। দুদক এবং র‍্যাব সুনির্দিষ্ট অভিযোগে নিজেদের মতো করে অভিযান পরিচালনা করতে পারে। তবে সোমবার রাতে দুদক ও র‍্যাবের অভিযান শুরুর পর বিষয়টি আমরা শুনেছি।

গত ৯ সেপ্টেম্বর মাহবুবুল আলম এফবিসিসিআই সভাপতি থেকে পদত্যাগ করেন। ওইসময় সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাহবুবুল ই-মেইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের ডিটিও বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। 

এর আগে গত বছরের ১৪ আগস্ট ২০২৩-২৫ মেয়াদে এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন মাহবুবুল আলম। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মাহবুবুল আলম ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হন ১৯৮৩ সালে। গত প্রায় চার দশকে কমোডিটি ট্রেডিং থেকে শুরু করে ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন তিনি। 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer