
ছবি- সংগৃহীত
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে ঠাকুরগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা।
আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক চিঠিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের স্থান ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে (বড় মাঠ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার লেখা থাকলেও ব্যারিকেডের জন্য প্রথম প্রহরে কেউই সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আইনজীবীদের মতো আরও অনেকেই ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসে ফিরে যান। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।
জেলা আইনজীবী সমিতিতে পাঠানো ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক চিঠি থেকে জানা গেছে, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে রাত ১২টা ১ মিনিটে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ (বড়মাঠ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সাড়ে ১২টার দিকে শহরের সাধারণ পাঠাগারের সামনে অবস্থিত ভাষা সৈনিক মরহুম দবিরুল ইসলামের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
এই চিঠি জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকা ও সময় অনুযায়ী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এন্তাজুল হক ও অন্যান্য সদস্যরা ফুল নিয়ে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে এসে দেখেন বড় মাঠ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চারপাশ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এ সময় শ্রদ্ধা জানাতে না পেরে আইনজীবীরা গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবে ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোলেমান আলীর স্বাক্ষরিত আরেক চিঠিতে রাত ১২টা ১ মিনিটে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সকাল ৬ টায় ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ (বড়মাঠ) শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার কথা উল্লেখ করা হলেও এই চিঠি আইনজীবীদের দেয়া হয়নি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এন্তাজুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে অফিসিয়ালি ভাবে আমাদের একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। যা প্রতিবছর করা হয়। সেই অনুযায়ী বড় মাঠ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরা আইনজীবীরা শ্রদ্ধা জানাতে আসছি। কিন্তু শহীদ মিনারে এসে দেখি কেউ নাই। ভেন্যু পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু ভেন্যু কোথায় করা হয়েছে তা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের কাছে থেকে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এতটা অবহেলা কোনো মতেই কাম্য নয়। আইনজীবী সমিতিকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে ও নিদিষ্ট ভেন্যু করে দেয়া হয়েছে বড় মাঠ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। যদি ভেন্যু পরিবর্তন করা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জানানো হলো না কেন? এভাবে আমাদের বিবৃত করা ঠিক হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। ভেন্যু যেখানেই হউক না কেনো তার পরেও আমরা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবো। তবে এমন আচরণ মোটেও কাম্য নয়।
এসময় শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের এক সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা রাত ১২টা ১ মিনিটে বড় মাঠ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করি। এবারও শ্রদ্ধা জানাতে আসলাম। এসে দেখি কিছুই নেই। আমি মনে করি এই ভেন্যু যে পরিবর্তন করা হয়েছে সেটার বিস্তর প্রচার দরকার ছিল। তাহলে মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে ঘুরে যেত না।’
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা এক যুগ ধরে জেনে আসছি বড় মাঠ শহীদ মিনারটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। প্রতি বছর আমরা শহীদ মিনারের চারপাশ ও প্রবেশ পথে আলপনা আঁকি। কিন্তু এবার দেখি ভিন্ন। সকাল থেকে শহীদ মিনারটি নোংরা হয়ে পড়ে আছে। কেউ পরিষ্কার করেনি। আমরা ছাত্ররা বিকেলে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে আলপনা এঁকে দেই। যাতে প্রথম প্রহরে সর্বস্তরের মানুষ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে। কিন্তু রাতে মানুষ ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসে ঘুরে যাচ্ছে। মিনারের চারপাশ বেড়া দিয়ে ঘেরা রাখা হয়েছে।’
তারা আরও বলেন, এমন টা তো আগে ছিল না। সরকার পতনের পর থেকে ভাগ হওয়া শুরু হয়েছে। যার যেটা পছন্দ না সে সেখানে যায় না বা কাউকে যেতে দেয় না। এটা তো হতে পারে না। একটা শহীদ মিনার সবার জন্য। যেটা হয়েছে বা হচ্ছে তা খুবই দুঃখজনক।
একজন ফেসবুকে লিখেন, আগে ফুল দিতেন পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে, এবার দিলেন সরকারি কলেজ মাঠে কিন্তু আমজনতা কেনো বড় মাঠ থেকে বঞ্চিত করলেন?
কাউসার কবির সৌরভ নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘জেলার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা যদি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ফেলে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান তাহলে জেলার সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শহীদ মিনারগুলো তো দোষ করেনি। সবখানে যাওয়া উচিত। কোনো বৈষম্য থাকা উচিত না।’
সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় উদ্যোগে সংগৃহীত তহবিল থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (জিলা স্কুল বড়মাঠ) নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনারটি। তখন থেকেই এই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সবাই।