
ছবি- সংগৃহীত
চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে বাসের যাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মির্জাপুর থানার ওসি মো. মোশারফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নাটোর থেকে এসে ওই বাসের যাত্রী ওমর আলী মামলা করেছেন।’
এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও দুই নারী যাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসটি ছাড়ার কিছু সময় পরেই আট থেকে দশজন ডাকাত চাকু, ছুরি ও পিস্তল নিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে। এ সময় তারা দুই নারীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই বাসের যাত্রীরা। বাসের চালক ও তার সহযোগীরা ডাকাতদের সহায়তা করেছেন বলেন ভু্ক্তভোগীরা।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাসের চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীকে গ্রেপ্তার করে নাটোরের পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে বড়াইগ্রামের থানার মোড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন, বাসের চালক রাজশাহীর বোয়ালিয়ার শাহমুকদুম কলেজ এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে বাবলু আলী (৩০), সুপারভাইজার সাধুর মোড় এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে সুমন ইসলাম (৩৩) এবং সহকারী পূর্ব কাঁঠালিয়া এলাকার আঙুর মণ্ডলের ছেলে মাহবুব আলম (২৮)।
যাত্রীদের অভিযোগের বরাতে বড়াইগ্রাম থানার ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের বাসটি সোমবার রাত ১০টায় গাবতলী থেকে ছেড়ে আসে। পথে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় বাসটিতে আরও কয়েকজন যাত্রী উঠে। বাসটি টাঙ্গাইল জেলায় আসলে নতুন যাত্রীসহ পূর্বের কয়েকজন মিলে আট থেকে দশ জনের একটি দল বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা যাত্রীদের মালামাল লুটপাটসহ দুই নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে মীর্জাপুর এলাকায় নেমে যায়।’
ওসি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে যাত্রীবাহী বাসটি বড়াইগ্রাম থানা মোড় এলাকায় পৌঁছালে যাত্রীরা বাসটি আটকে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে বাসটির চালকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ও বাসটি জব্দ করে।’
বাসযাত্রী মজনু আকন্দ বলেন, ‘গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসটি ছাড়ার কিছু সময় পরেই আটজন ডাকাত চাকু, ছুরি ও পিস্তল নিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে। তারা ৪০-৫০ জন যাত্রীর কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নেয়।’
এ সময় দুই নারী যাত্রীকে ডাকাতেরা ‘ধর্ষণ’ করে বলেও অভিযোগ করেন এই যাত্রী।
পরে ডাকাতেরা বাসটিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় নির্জন স্থানে থামিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি মির্জাপুর থানাকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বাসের আরেক যাত্রী ওমর আলী বলেন, ‘ডাকাতদের সহায়তা করেছেন বাসের চালক ও তার সহযোগীরা। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এটাতো টাঙ্গাইলের ঘটনা বলছে যাত্রীরা। তাই বড়াইগ্রাম থানায় মামলা নেয়ার সুযোগ নাই। এছাড়া গ্রেপ্তাররা ওই ঘটনায় জড়িত বলে যাত্রীরা সন্দেহ করছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী যাত্রীদের মীর্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’
এদিকে নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালত সূত্রে জানা যায়, বড়াইগ্রাম থানার এসআই শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চালানমূলে ইউনিক রোড রয়েলস বাসের চালক বাবলু আলী, সুপারভাইজার সুমন ইসলাম ও সহকারী মাহবুব আলমকে বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তাদের আদালতের সামনে হাজির করলে আদালত শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন।