
ছবি- সংগৃহীত
ভারতীয় সীমান্তবর্তী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ধানখেতে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ফাঁদ পেতে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে সরজমিন পরিদর্শন করে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে নালিতাবাড়ীর পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামে গুচ্ছগ্রাম –সংলগ্ন গারো পাহাড়ের ঢালে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ফাঁদ পাতা চাষির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে অবস্থায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আ.ন. ম আবদুল ওয়াদুদ জানান। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সঙ্গে ছিলেন
ওয়ার্লড লাইভ সার্কেলের বন সংরক্ষকসানাউল্লাহ পাটোয়ারী ও ওয়ার্ল্ড লাইফ বিশেষজ্ঞ ড. নাসির উদ্দিন।
ওই ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার রাতেই বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে বৈদ্যুতিক ও জিআই তার জব্দ করেছেন। শুক্রবার সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে ১৮-২০টি বন্য হাতির পাল উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় ও জঙ্গলে অবস্থান করছে। দিনের বেলায় টিলা বা জঙ্গলে অবস্থান করলেও সন্ধ্যা নামার পর হাতির পাল দল বেঁধে ধানখেতে, লোকালয়ে নেমে আসে। এ জন্য কৃষকেরা ফসল রক্ষায় মশাল জ্বালিয়ে, রাত জেগে হাতির পাল প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামে গুচ্ছগ্রাম– সংলগ্ন এলাকায় পাহাড়ের ঢালে ৭০-৮০ একর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। বন্য হাতির কবল থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকেরা ধানখেতে পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে তার দিয়ে ঘিরে রাখেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে হাতির পাল সেই ফসল খেতে হানা দেয়। এ সময় একটি হাতি তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ সময় অন্য হাতিগুলো মৃত হাতিটিকে ঘিরে রাখে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে জেনারেটরের তার জব্দ করে নিয়ে যান। এ সময় হাতির দলটি মৃত হাতির আশপাশে জঙ্গলে অবস্থান করছিল। শেষ রাতে মৃত হাতিটি রেখে অন্য হাতিগুলো জঙ্গলে ফিরে যায়।
স্থানীয় মধুটিলা এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, খাদ্যের সন্ধানে আমন ও বোরো মৌসুমে বন্য হাতির দল লোকালয়ে নেমে আসে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ১৮-২০টি হাতি পাহাড় থেকে গুচ্ছগ্রাম–সংলগ্ন ধানখেতে নেমে আসে। এ সময় জেনারেটরের তারে জড়িয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়।
মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, পল্লী বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে একটি মাদি হাতির মৃত্যু হয়েছে। হাতিটির বয়স আট বছর হবে। রাতেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মৃত হাতির ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ডিএফও আ.ন. ম আবদুল ওয়াদুদ জানান গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ জিয়াউর রহমান গত চার পাঁচ মাস পূর্বে একই জমিতে হাতির দ্বারা ফসল নষ্টের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪০ হাজার টাকা পায় বন বিভাগ থেকে। তারপরও হাত পেতে হাতির মৃত্যু ঘটায়। এই মাদি হাতিটির সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সকালে ময়না তদন্ত কাজ শেষ করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। আসামীরা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ৩৬ (১)/৪১ ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছে।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা শুক্রবার বিকেলে জানান বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শেরপুরের ওয়াউল্ডলাইফ রেঞ্জার মোঃ আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদি হয়ে ফাঁদ দিয়ে হাতি মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলার অজু করা হয়েছে মামলা নম্বর ২৭ তারিখ ২১/৩/২০২৫ খ্রিস্টাব্ধ। এ মামলায় প্রধান আসামি জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।