ফাইল ছবি
বাজারে অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে ও ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের আমদানি অনুমতি বা আইপি দেয়ার খবরে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে পৌঁছালে দাম আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন ধরে দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির। পেঁয়াজ উৎপাদন করে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় বিগত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছিল। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে মসলাজাতীয় এ পণ্যের দাম।
রমজানের ঈদের আগেও যে পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, তা বাড়তে বাড়তে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রোববারও কেজিতে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছিল।
তবে লাগামহীন বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতি দেয়ার খবরে কমতে শুরু করেছে দাম। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মার্চে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা ছিল। এরপর দাম বেড়ে রোববার সকাল পর্যন্ত এ বাজারে ৯২ টাকা থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় পেঁয়াজ। ক্ষেত্র বিশেষে তা ১০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে।
তবে আমদানির অনুমতির পরপরই দাম কমতে থাকে। এ বাজারে সোমবার প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানির অনুমতি দেয়ার পর থেকে পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়ায় কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম পড়ে যায়। যার প্রভাব পড়েছে খাতুনগঞ্জেও। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রবেশ শুরু হলে দাম আরও কমবে। তখন পেঁয়াজের দাম আগের পর্যায়ে নেমে আসবে।
আমদানির খবরে দিনাজপুরের হিলিতেও কমেছে পেঁয়াজের দাম। কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সকালে সরেজমিনে হিলি বাজার ঘুরে দেখা যায়, আড়তগুলোতে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও আগের তুলনায় ক্রেতা কমেছে। গত শনিবার এ বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। সেই পেঁয়াজ সোমবার সকালে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে।
আমদানি খবরে রাজধানীর বাজারেও পড়েছে প্রভাব। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি শুরু হলে দাম আরও কমবে।
এদিকে ক্রেতারা জানান, বাজার সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। এটি নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ভোক্তারা পিষ্ট হতে থাকবেন, আর এক শ্রেণি চুটিয়ে ব্যবসা করে যাবেন।
এদিকে, রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি আমাদের জন্য উভয় সংকটের মতো। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে দাম অনেক কমে যায়, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; পেঁয়াজ চাষে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আর আমদানি না করলে দাম বেড়ে যায়, ভোক্তাদের কষ্ট হয়। সেজন্য, সবসময়ই আমরা চাষি, উৎপাদক ও ভোক্তাসহ সবার স্বার্থ বিবেচনা করে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।’