Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

ভাদ্র ৩১ ১৪৩১, সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিডিআর বিদ্রোহে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন

কাজী রকিবুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ২১ আগস্ট ২০২৪

প্রিন্ট:

বিডিআর বিদ্রোহে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন

ফাইল ছবি

চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও কারাবন্দীদের মুক্তির দাবিতে বুধবার দুপুরে চাকুরিচ্যুত সদস্যরা প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন হয়েছে। প্রেসক্লাব যশোরে সামনে ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ ও যশোর শহরে বিক্ষোভ করেছে  চাকুরিচ্যুত ‘বিডিআর সদস্যরা।যশোর অঞ্চলের ব্যানারে এই মানববন্ধন করা হয়।

যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ বাগেরহাট, মাগুরা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া জেলার প্রায় তিন শতাধিক চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মানববন্ধনে অংশ নেয়। তাঁরা বিভিন্ন দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘বিডিআর আমার স্বামীর চাকরি ফেরৎ চাই, ৫৭ সেনাকর্মীসহ ৭৪ জন হত্যার বিচার চাই, আমরা নির্দোষ বিডিআর চাকুরি ফেরত চাই, আমার বাবা বিদ্রোহী নয়, দেশ প্রেমিক বিডিআর সৈনিক। মানববন্ধন শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। শেষে যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন নেতৃবৃন্দ।  

মানববন্ধনে চাকুরীচ্যুত বিডিআর সদস্যরা তাদের বক্তৃতায় বলেছেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা এ দেশের সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার নীলনকশা করেন। সেনা কর্মকর্তাদের খুন ও গুমের পর এ দেশের হাজার হাজার নিরীহ বিডিআর সদস্যকে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়। যাঁদের মধ্যে এখনো অনেক বিডিআর সদস্যরা বিনা বিচারে জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকেই নিখোঁজ আছেন।

যেসব বিডিআর সদস্যরা কারাবরণ করে বাড়িতে ফিরেছেন, চাকুরি হারিয়ে অসহায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১৮ হাজার ৫২০ জন বিডিআর সদস্যকে বিনা বিচারে কারাবরণ করতে হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের খুঁজে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আর যাঁরা নিরীহ ও নিরপরাধ বিডিআর সদস্য চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। আর যাঁরা এখনো কারাবন্দী আছেন, তাঁদেরও জেল থেকে মুক্তি দিয়ে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান বক্তরা।

হাতে দাবির প্ল্যাকার্ডে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ৭৫ বছর বয়সী বিডিআর সুবেদার সিরাজুল কবির। তিনি জানান, ‘আমার আর চাকুরি ৩ মাস ২২ দিন ছিলো। তার আগেই বিডিআর হত্যাকান্ডের অভিযোগে দিয়ে আমাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। আড়াই বছর কারাবরণ করে তিনি নিজ গ্রাম সাতক্ষীরাতে চলে যান। তিনি জানান, ‘চাকুরি শেষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু সেনা হত্যার তর্কমা নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আসলেই আমি হত্যার সঙ্গে ছিলাম না। তারপরেও চাকুরিচ্যুত হয়ে জেল খাটলাম। বাড়িতে থাকাকালীন পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।’

খুলনা পাইকগাছার থেকে আসা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘চাকুরির ৬ মাস পুরার আগে চাকুরিচ্যুত হয়েছি। দেড় বছর কারাবরণ করে যখন পরিবারের কাছে ফিরেছিলাম। তখন লজ্জায় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। গেছিলাম দেশ রক্ষা, দেশ সেবার জন্য। কিন্তু আমাদের ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হলো বিডিআর বিদ্রোহী হিসাবে। আমার সন্তানদের ভালো স্কুলে ভর্তি করতে পারেনি। ভালোবাসে মানুষ করতে পারেনি। বাবা হিসাবে সন্তানদের কাছে লজ্জাবোধ করি।’  

মানববন্ধনে উপস্থিত এক নারী নিজেকে একজন বিডিআর সদস্যের স্ত্রী পরিচয় দেন। তার বাড়ি সাতক্ষীরা তালা থানাতে। তিনি বলেন, আমার স্বামী ঢাকা পিলখানায় কর্মরত ছিলেন। ওই ঘটনার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে বারবার রিমান্ডে নেওয়ার পরও তাঁর কোনো দোষ পাওয়া যায়নি। তিনি আদালতের মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হন। এরপরও তাঁকে এখনো জেল খাটতে হচ্ছে। আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই এবং চাকরিতে পুনর্বহাল চাই। তিনি বলেন আমার তিন সন্তান। স্বামীর অনুপস্থিতিতে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ ৬টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিসমূহ হলো- নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল চাই। নিরপরাধ বিডিআর সদস্য যারা এখন পর্যন্ত জেলে বন্দি আছে তাদের অবলিম্বে মুক্তি চাই। যে সমস্ত চৌকস সেনা অফিসার পিলখানার হত্যাকান্ডে শহিদ হয়েছেন ঐ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার করতে হবে। ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ সেনা হত্যা দিবস’ রাস্ঠ্রীয়ভাবে পালনের দাবি। শহীদ সেনা অফিসার পরিবার কর্তৃক যে ৭টি দাবি উপস্থাপন করেছেন ঐ ৭টি দাবির পূর্ণ সমর্থন জানাই। বিডিআর সদস্য চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer