ছবি: সংগৃহীত
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কে. এম. জাকির হোসেন বলেন, 'আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষির অবদান অপরিসীম। গ্রামীণ জনজীবন কৃষিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং জীবনযাত্রার সামগ্রিক মানোন্নয়নে কৃষি এবং এর উপখাতসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান সাফল্যগুলোর কৃতিত্ব এ দেশের কৃষক ও কৃষিবিদ গ্রাজুয়েটদের।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমি, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বর্তমান গতিধারাকে অব্যাহত রাখা আজকের বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য পরিবর্তনশীল আবহাওয়া, উচ্চ ফলনশীল শস্যজাত, গবাদিপশু, হাঁসমুরগী ও মৎসের উন্নতজাত উদ্ভাবন এবং সেই সঙ্গে কৃষকের মাঝে পরিবেশসম্মত প্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা কৃষি গ্রাজুয়েটদের প্রধান দায়িত্ব। তারা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ কৃষি উন্নয়নে আরো কৃতিত্বপূর্ণ ও বাস্তবধর্মী অবদান রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস।'
শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস। ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ মাঠে এক জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম জেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে “কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০২১” মহান জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কে. এম. জাকির হোসেন।
ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, উচ্চতর কৃষি শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অগ্রগতিকল্পে এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ইনকিউবেটরের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে কৃষি খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, গণমুখী ও সর্বজনীন, কর্মমুখী ও আত্মকর্মসংস্থান এবং জ্ঞানভিত্তিক কর্মক্ষম ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা প্রদানসহ কৃষি শিক্ষা ও উন্নয়ন দর্শনের সফল বাস্তবায়েনর লক্ষ্যে বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকার বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছেন। তাছাড়া, শিক্ষার মানোন্নয়নসহ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নানাবিধপদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশে সকলের জন্য উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে (২০২০-২০২৪) কৃষি ও মৎস্য অনুষদে ছাত্রছাত্রী ভর্তির অনুমতি প্রদান করেছে। প্রথম বর্ষে দুইটি অনুষদে ৪০ জন করে মোট ৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবে। প্রাথমিকভাবে কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস্ এর অব্যবহৃত স্থাপনাসমূহসহ আরো ২/১টি বাড়ি ভাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে পরিচালনা করা হবে। তাছাড়া, নালিয়ার দোলায় ২৫০ একর জায়গায় স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে প্রণয়নকৃত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কে. এম. জাকির হোসেন বলেন, :কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে উদ্ভাবনী ও অভিযোজিত প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক, সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষি শিল্পোদ্যোক্তার বিদ্যমান ও উদীয়মান সমস্যাবলি সমাধানের উদ্দেশ্যে প্রায়োগিক ও মৌলিক গবেষণা পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সাথে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রক্রিয়ান্বিত করা হয়েছে। যৌথ সহযোগিতামূলক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন আধুনিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কুড়িগ্রামের কৃষি উন্নয়নে চর ও ফ্লাডপ্লেইন এগ্রিকালচার শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রাধিকার দিয়ে এই এলাকাকে কৃষি উন্নয়নের একটি হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা হবে যা এই এলাকার তথা জাতীয় কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।'
'আমরা একান্তভাবে বিশ্বাস করি নব প্রতিষ্ঠিত এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে কৃষি ক্ষেত্রে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি শিক্ষা ও গবেষণায় সংযুক্ত করে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে কৃষি শিক্ষার অনন্য একটি স্মার্ট ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এই পরম লগ্নে কুড়িগ্রাম জেলাসহ দেশের সকল স্তরের জনগণ ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কে. এম. জাকির হোসেন।