ছবি- সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকাল ৯টা থেকে নিজ নিজ কলেজের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি দিয়েছেন তারা।
রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পারসন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের দাবি ছিল চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেটি করেনি। উল্টো ধারণ ক্ষমতার অধিক শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা এসব নিয়ে বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দিয়েছি। সবশেষ ঢাবি প্রো-ভিসি (শিক্ষা) আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। এর প্রতিবাদে আমরা নীলক্ষেত তোরণের নিচে অবস্থানকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পুলিশ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি দাবিও জানান আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, সাত কলেজকে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে। প্রো-ভিসি ড. মামুন আহমেদকে ঢাবি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে।
এ সময় ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (সোমবার) সকাল ৯টা থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস এলাকায় ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবেন।
এর আগে রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, রবিবার বিকালে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ঢাবি প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন।
এর জেরে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন। ঢাবি প্রো-ভিসি ড. মামুন আহমেদ ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়ে সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজে প্রবেশ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পারসন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম অনুযায়ী ঢাবির উপ-উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাননি। আমরা সব শিক্ষার্থী মিলে উপ-উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করতে যাব।
এরপর ঢাকা কলেজের আবাসিক হল থেকে আরো শিক্ষার্থী নিয়ে রাত ১১টার দিকে ঢাকা কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বার মুক্তি ও গণতন্ত্রের তোরণের কাছে আসলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের বোঝানোর জন্য সাত কলেজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুলিশ কথা বলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরও এসে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে উপ-উপাচার্য ক্ষমা না চাইলে সেখান থেকে যাবেন না জানিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নেন।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা এএফ রহমান হলের সামনে অবস্থান নেন। অবস্থানের এ পর্যায়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতের দিকে চলে যান। পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পিছু হটে। পরবর্তীতে রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে তারা আবার পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
পরে রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীদের থামাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ আসেন। তিনি ঢাকা নীলক্ষেত মোড় থেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর হাসনাত উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করলে নিজেই উভয়পক্ষের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। পরে তিনি সংঘর্ষ এলাকা ছেড়ে ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান।
অন্যদিকে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করতে দেখা যায়।