ছবি : বহুমাত্রিক.কম
বৃহত্তর সিলেটে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠি ও ভাষাভাষির মানুষ রয়েছে। বনাঞ্চল, চা বাগান আর পাহাড়ি টিলা বেষ্টিত বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, ইতিহাস, ধর্মীয় ঐতিহ্য, কৃষ্টি, প্রথা ও উৎসব বাঙালিদের মুগ্ধ করলেও নিজেদের নানা সমস্যার মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে তাদের মাতৃভাষা।
নিজেদের মাঝে ভাষাচর্চা না করায় বাংলা ভাষা তাদের গ্রাস করছে বলেও তারা দাবি করছেন। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা কেন্দ্র ও সরকারি পৃষ্টপোষকতা না পাওয়ায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির মাতৃভাষা এবং নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রয়েছে হুমকির মুখে। বাংলা ভাষার পাশাপাশি নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি তুলেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির তালিকায় খাসিয়া, গাঢ়ো, ত্রিপুরা, মুন্ডা, সাওতাল, বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী, মৈতৈ মনিপুরীসহ ১৩টি সম্প্রদায় রয়েছে। এর বাইরে চা বাগানে তেলেগু, রবিদাস, কৈরী সহ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির বসবাস। তাদের অধিকাংশরা পাহাড়, টিলার পাদদেশে, বনজঙ্গলে কিংবা সমতল ভূমিতে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবন যাপন করছেন। দেশে অর্থনৈতিকভাবে তাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমির অধিকার সহ জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যার পাশাপাশি নিজেদের মাতৃভাষাকেও হারাতে বসেছেন। নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক মাতৃভাষা চর্চাকেন্দ্র না থাকা, সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাব, বাড়িঘর সহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার সব মিলিয়ে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্টির মাতৃভাষার অধিকার হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, কমলগঞ্জে বড় ও ক্ষুদ্র ভাষাভাষির মানুষ আছে। অন্য কোন উপজেলায় তা নেই। আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃতি বাড়ার সাথে সাথে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির তাদের নিজস্ব ভাষার প্রতিও দায়িত্ববোধ বেড়ে গেছে। অনেকেই নিজস্ব ভাষা চর্চা করেন না। ফলে বাংলা ভাষা তাদের গ্রাস করছে।
কমলগঞ্জের শমশেরনগর চা বাগান থেকে প্রকাশিক মাসিক চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক ইউপি সদস্য সীতারাম বীন বলেন, চা বাগানে আমাদের অসংখ্য ভাষাভাষির লোকদের মধ্যে বাংলা ভাষায়ই অধিকাংশরা কথা বলেন। নিজস্ব মাতৃভাষা কেউ ব্যবহার না করার কারনে এবং বাড়িঘরেও চর্চা না করার কারনে আমাদের মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সরকারি পৃষ্টপোষকতায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মাতৃভাষা চর্চা কেন্দ্র চালু করা প্রয়োজন বলে তারা মন্তব্য করেন।
মৌলভীবাজারের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির জিডিসন প্রধান সুচিয়ান বলেন, নিজস্ব ভাষা চর্চা রাখার জন্য অধিকাংশ পুঞ্জিতে নিজেদের অর্থায়নে পরিচালিত স্কুল সমূহে খাসিয়া ভাষা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া প্রত্যেক সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে আসছি। প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা একাডেমিক ব্যবস্থা না থাকার কারনে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি হুমকির মুখে। সরকারি পৃষ্টপোষকতা না পেলে এসব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে।
লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী আদিবাসী ফিলা পত্মী জানান, বৃহত্তর সিলেটের ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মধ্যে হবিগঞ্জের আলীয়াছড়া ও জাফলং এর নকশিয়ার পুঞ্জিতে দু’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া আর সরকারি কোন বিদ্যালয় নেই। তবে খাসিয়াদের চাঁদায় পরিচালিত হচ্ছে কয়েকটি কমিউনিটি বিদ্যালয়ে নিজস্ব ভাষা চর্চার চেষ্টা চলছে।
বহুমাত্রিক.কম