ছবি: বহুমাত্রিক.কম
স্কোলিওসিস কিঃ? স্কোলিওসিস একটি মেরুদণ্ডের সমস্যা যেখানে জন্মগত বা বয়স জনিত ক্ষয় এর কারনে মেরুদণ্ড বেঁকে যায়, যার কারনে ঘাড় কোমর এবং মেরুদণ্ড সহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে ব্যথা এবং অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। বয়ঃসন্ধি এবং বারধ্যক্যে এর সম্ভাবনা বেশী । অনেক ক্ষেত্রে এর কারণ পুরাপুরি নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।
স্কোলিওসিস নিয়ে কিছু ধারনাঃ
১। স্কোলিওসিস পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের ছেলেদের তুলনায় ইডিওপ্যাথিক স্কোলিওসিস হওয়ার সম্ভাবনা ১০ গুণ বেশি
২। বিশ্বের প্রায় শতকরা ৩ ভাগ মানুষ (২০ কোটি ) প্রতিবছর স্কোলিওসিস এ আক্রান্ত হয়
সারা বিশ্বে ধরন ভেদে প্রতি ৪০ জনে ১ জন স্কোলিওসিস এ ভুগছেন
৩। এটি জীবনের জীবনের প্রথম অথবা শেষ পর্যায় দেখা যায় । বাচ্চাদের মধ্যে, এটি ৮-১২ বছর বয়সের কাছাকাছি দেখা যায় এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এটি সাধারণত ৬০ বছর বয়সের কাছাকাছি দেখা যায়।
৪। শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ স্কোলিওসিসের কারনে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যায় ভুগেন
স্কোলিওসিস আক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগ নারী রা মাসিকের সমস্যায় ভুগেন
৫। স্কোলিওসিস সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় হবার সম্ভাবনা অন্ধ ব্যক্তিদের ৫ গুণ বেশি এবং বধিরদের ৩.৭ গুণ বেশি প্রায় ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে স্কোলিওসিস বংশগত হতে পারে
৬। স্কোলিওসিস আক্রান্ত রোগীদের গর আয়ু ১৪ বছর হ্রাস করে এবং মৃত্যুর হার ১৫% বৃদ্ধি করায়
৭। স্কোলিওসিস আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ১০০ ভাগ এ ঘাড় কোমর এবং মেরুদণ্ডের ব্যথায় ভুগে ।
স্কোলিওসিসের ধরনঃ
বয়সভেদে স্কোলিওসিস ২ ধরনের হয়
Adult scoliosis:
Juvenile scoliosis:
স্কোলিওসিসের কারনঃ
১। ছোটদের ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে স্কোলিওসিসের কারন খুঁজে পাওয়া যায় না।
২। বয়স্কদের ক্ষেত্রে স্কোলিওসিস মূলত মেরুদণ্ডের ক্ষয় জনিত কারনে হয় , কিছুক্ষেত্রে বয়স্কদের ক্ষেত্রেও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
৩। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ নিউরোলজিক্যাল সার্জনস" এর মতে, ১০% স্নায়বিক, ১৫% জন্মগত এবং ৬৫-৮০% ক্ষেত্রে স্কোলিওসিসের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না । আঘাত বা সংক্রমণ স্কোলিওসিসের আরেকটি কারণ।
স্কোলিওসিসের লক্ষণ সমূহঃ
১। অসম কাঁধ, একদিকের কাঁধ আরেকদিকের থেকে বেশী উঁচু থাকা
২। একটি দৃশ্যমান বাঁকা মেরুদণ্ড
৩। পাঁজর এর হাড় একদিকে বেশী দৃশ্যমান
৪। অসম কোমর ।
৫। একদিকে ঝুঁকে থাকা
৬। শরীর একদিকে বেঁকে যাওয়া
চিকিৎসাঃ
চিকিৎসা সমূহঃ
১। পর্যবেক্ষণ
২। ব্যাম
৩। ফিসিওথেরাপি
৪। ব্রেসিং
৫। সার্জারি – শুধু মাত্র ৫-১০ ভাগ ক্ষেত্রে সার্জারি করা প্রয়োজন
সার্জারি করলে স্কোলিওসিস ভালো হয় এবং রোগী ব্যথা মুক্ত জীবন যাপন করতে পারে
স্কোলিওসিস এ রোগীর কি সমস্যা হতে পারেঃ ?
১। মেরুদণ্ডের আকৃতি পরিবর্তন
২। শরীর এর আকৃতি পরিবর্তন
৩। চলাফেরায় সমস্যা
৪। ঘাড় ব্যথা
৫। কোমর ব্যথা
৬। মেরুদণ্ডের ব্যথা
৭। শ্বাসকষ্ট
৮। স্বাভাবিক কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া
চিকিৎসা বিলম্বে স্কোলিওসিস গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে-
৯। ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে হার্ট এবং ফুসফুসের সমস্যা হয় যা মৃত্যুর সবচেয়ে সাধারণ কারণ
১০। ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে খাদ্যনালী এবং হজম এ সমস্যা হয়
উপসংহারঃ
স্কোলিওসিস নিয়ে ভয় নয় বরং দরকার সচেতনতা। মনে রাখবেন
• স্কোলিওসিস নিরাময় যোগ্য
• স্কোলিওসিস নিয়ে সচেতনতা সব থেকে গুরুত্বপুর্ন , প্রাথমিক অবস্থায় নির্নয় করাগেলে সার্জারি করা প্রয়োজন নয়।
• আপনি যদি সন্দেহ করেন যে আপনার সন্তানের স্কোলিওসিস আছে, প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সা ভবিষ্যতে অস্ত্রোপচার এড়াতে সাহায্য করতে পারে
• স্কোলিওসিস নিয়েও গর্ভধারন করা সম্ভব
• স্কোলিওসিস নিয়েও খেলাধুলা করা যায়
ডা. মো. ফরিদ রায়হান: নিউরো ও স্পাইনাল সার্জন, কনসালট্যান্ট, নিউরোসার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
চেম্বার : কমফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার-৩, ১৬৫-১৬৬, গ্রিন রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-২২২২৪৬৩৩৮-৪১, মোবাইল : ০১৭৩১-৯৫৬০৩৩