
ফাইল ছবি
প্রকৌশলী আফসার আহমেদ নামে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে দায় খুঁজে পাওয়ায় চিকিৎসক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের নিবন্ধন বাতিলের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ডা. স্বপ্নীল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওই প্রকৌশলীর মৃত্যুর ঘটনায় ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছে মন্ত্রণালয় থেকে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ গত ১৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ওই কপি আফসার আহমেদের পরিবারের হাতে আসে মঙ্গলবার। যুগান্তরের কাছেও নির্দেশনার একটি কপি এসেছে।
এ বিষয়ে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠি তারা পেয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শারাবান তাহুরা স্বাক্ষরিত বিএমডিসির রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আফসার আহমেদের এন্ডোস্কপিকালীন মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়িত্বে অবহেলার কারণে অধ্যাপক মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হলো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফরকে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের আরেক চিঠিতে বলা হয়, ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বিরুদ্ধে প্রকৌশলী আফসার এন্ডোস্কপিকালীন মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী এবং গুরুত্ব বিবেচনায় ল্যাবএইড হাসপাতালের বিষয়ে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নিতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চিকিৎসক জাফর যুগান্তরকে বলেন, ‘ঘটনাটি সম্ভবত ২০২৩ সালের। সে সময় আমি এখানে ছিলাম না, তাই ঘটনাটি জানি না। মন্ত্রণালয়ের চিঠি এখনও আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি। চিঠি হাতে পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর ছাতক উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী আফসার আহমেদ ধানমন্ডির বেসরকারি ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। তিনি চিকিৎসক স্বপ্নীলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং ওই দিন এন্ডোস্কপি করাতে এসেছিলেন। ওই ঘটনার সাড়ে চার মাস পর চিকিৎসক স্বপ্নীল ও ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ করেন আফসার আহমেদের ভাই খায়রুল বাশার। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে লিখিত অভিযোগে বাশার ‘চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অবহেলা ও গাফিলতির’ কারণে তার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।
বাশার তার ভাইয়ের মৃত্যুর দিনের বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর ধানমন্ডির ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের কাছে চিকিৎসা নিতে যান তার ভাই। ডা. স্বপ্নীল রোগীকে দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন সেখানে এন্ডোস্কপি, কোলনস্কপিসহ কয়েকটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চারদিন পর ৯ নভেম্বর এন্ডোস্কপি ও কোলনস্কপির পরীক্ষার সময় দেন। সে অনুযায়ী ৯ নভেম্বর সকাল ৯টায় ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতাল যান আফসার আহমেদ।
অভিযোগে বলা হয়, এন্ডোস্কপি করার দিন হাসপাতালে যাওয়ার পর তাকে জানানো হয় বিকাল ৪টায় এন্ডোস্কপি করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সকালে শুরু করা হলেও পরীক্ষাটি করা হয় রাত ৮টায়। তিনি (ডা. স্বপ্নীল) এসে রোগীর শারীরিক অবস্থার কোনো পর্যবেক্ষণ না করে, কোনো ধরনের প্রি-ইভালুয়েশন ছাড়াই অ্যানেস্থিশিয়া প্রয়োগের নির্দেশ দেন। এরপর তিনি টেস্ট করানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। টেস্ট করানোর এক পর্যায়ে আমার ভাইকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলা হয়- আমার ভাইয়ের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। তাই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হচ্ছে। সেদিন রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।