ফাইল ছবি
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় দুই দিনের নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে ডা.আফসার আলী মৃত নবজাতককে খুলনায় রেফার্ড করেন। তবে চিকিৎসকের রেফার্ড কৌশল বেশি সময় গোপন থাকেনি। এটা ফাঁস হওযার পর মৃতের স্বজনরা হট্টগোল করে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে শিশু ওয়ার্ডে মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। মৃতের স্বজনদের দাবি, রাতভর রোগির চিকিৎসা মেলেনি। মৃত্যুর পর দায় এড়াতে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, মৃতের স্বজনদের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের শেখহাটি গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী শান্তা ইসলাম পুত্র সন্তান প্রসব করেন। পরের দিন ৮ সেপ্টেম্বর শারীরিক ভাবে অসুস্থ হলে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. পলাশ কুমার বিশ্বাসের ব্যক্তিগত চেম্বারে নেয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ নানা ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু রিপোর্টে তেমন কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। পরে চিকিৎসক সাধারণ নিউমোনিয়া হয়েছে বলে রোগীকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। সেই অনুযায়ী তার নবজাতক সন্তানকে রাত ৮ টার দিকে হাস্পাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
নবজাতকের মা শান্তা ইসলাম জানান, ভর্তির কিছু সময় পর একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগী দেখতে আসেন। পরে অনকলে আসেন শিশু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা.আফসার আলী। তিনি ডাক্তার পলাশ কুমার বিশ্বাসের প্রেসক্রিপশন দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। রোগীর চিকিৎসা না দিয়ে তাকে গালমন্দ করেন। ডা. আফসার আলী বলতে থাকেন "ডা. পলাশ কুমারকে দেখায়ছেন ৭০০ টাকা ভিজিট দিয়ে। এখন ফকিরের মতো এখানে (জেনারেল হাসপাতাল) এনেছেন কেনো? রোগীকে আমার চেম্বারে নিয়ে যান পাছায় আঙ্গুল দিয়ে আমি পায়খানা করিয়ে দেবো"। হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা নিতে এসেছেন। যোগ করেন তিনি।
শান্তা ইসলাম আরও জানান, কাকুতি-মিনতির পর ডা. আফসার আলী চিকিৎসা দিয়ে চলে যান। রাতে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক-সেবিকাদের ডেকে পাওয়া যায়নি। বরং সেবিকারা তাদের সাথে রুঢ় আচরণ করেছেন। সকালে একজন ইন্টার্ন রোগী দেখতে আসেন। তিনি নামমাত্র চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। কিছু সময় পর নবজাতকের মৃত্যু হয়। তাদের ধারণা, বয়সের তুলনায় উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন ব্যবহার করার কারণে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
সাইফুল ইসলাম ও শান্তা ইসলাম জানান, সঠিক চিকিৎসার অভাবে নবজাতক সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্বজনরা ওয়ার্ডে হট্টগোল শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে ডা. আফসার আলী ওয়ার্ডে এসে ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে বলেন রোগী বেচে আছে। এ সময় তড়িঘড়ি করে খুলনায় রেফার্ড করেন। চিকিৎসকের কৌশল ফাঁস হওয়ার পর স্বজনরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
পরে নবজাতকের মৃতদেহ নিয়ে তারা জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসক-সেবিকাদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হন। সেখানে এসেও ডা. আফসার আলী তাদের সাথে মারমুখী আচরণ করেন। এরপর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. বজলুর রশীদ টুলু মৃত রোগীর স্বজন ও ডা. আফসারকে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এই বিষয়ে ডা. আফসার আলী জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর নবজাতককে খুলনায় রেফার্ড করার অভিযোগ মিথ্যা। রোগীর শ্বাস চলাকালীন সময়ে খুলনায় রেফার্ড করা হয়েছিল। কিন্তু স্বজনরা নিয়ে যাননি। তিনি আরো জানান, নবজাতকের চিকিৎসায় কোন অবহেলা করা হয়নি। জন্মের পর পেটের নাড়ি জড়িয়ে থাকার কারণে ইনফেকশন হয়ে অবস্থা খারাপ ছিলো। যে কারণে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. বজলুর রশিদ টুলু জানিয়েছেন, চিকিৎসা অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু ও মৃত্যুর পর খুলনায় রেফার্ড করার অভিযোগে স্বজনরা হট্টগোল করেছে। তাদের লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, ঘটনাটি জানার পর মৃত রোগীর স্বজন ও অভিযুক্ত চিকিৎসকের সাথে কথা বলেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।