Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

কার্তিক ২৩ ১৪৩১, শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪

পরানগঞ্জে চিকিৎসা বঞ্চিত দশ লক্ষাধিক মানুষ

মোঃ নজরুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ৮ নভেম্বর ২০২৪

প্রিন্ট:

পরানগঞ্জে চিকিৎসা বঞ্চিত দশ লক্ষাধিক মানুষ

ফাইল ছবি

ময়মনসিংহ জেলার তিনটি উপজেলার  দুর্গম চরাঞ্চলের দশ লক্ষাধিক  মানুষের চিকিৎসা সেবায় নির্মিত পরানগঞ্জ ২০ শয্যার  হাসপাতালটি বিগত  ২২ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। জনবল কাঠামো অনুমোদন না পাওয়ায় এবং  যন্ত্রপাতি না থাকায় এটি শুধু নামেই হাসপাতাল। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দুর্গম এলাকার লোকজন দুর্ভোগেই রয়ে গেছে। 

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পরানগঞ্জ ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রবেশ প্রবেশ করে চুনকাম উঠে যাওয়া দেয়ালে গর্ভবতী সেবা, স্বাভাবিক প্রসব সেবাসহ হরেক রকমের সেবার কথা উল্লেখ থাকলেও ভেতরে কোন কিছুই চালু নেই। হাসপাতালের নামের পাশে ‘ ২০ শয্যা’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্বই নেই।  এখানে জোড়াতালি দিয়ে  শুধুমাত্র চালু রয়েছে বহির্বিভাগ চিকিৎসা কেন্দ্র (আউটডোর)। মাঝে মধ্যে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেও প্যারাসিটামল, স্যালাইন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধেরও বরাদ্দ নেই। বন্ধ রয়েছে ইনডোর বিভাগও। নান্দনিক অবকাঠামো থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় জনবল।

এ হাসপাতালের নাম পরানগঞ্জ ২০ শয্যা হাসপাতাল হলেও বিগত ২২ বছরেও এ হাসপাতাল কোনো কাজেই আসছে না চরাঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দার। ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাও না থাকায় তারা এ হাসপাতালের নামই যেন ভুলতে বসেছেন।  

জানা যায়, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার লক্ষে ২০০৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরানগঞ্জ ইউনিয়নে ২০ শয্যার এ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেই সময়ের ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু।  প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ২০০৬ সালের ১৭ অক্টোবর এ হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিতেই নির্মিত হয় চিকিৎসক-কর্মচারীদের জন্য কোয়ার্টার।  পরে ২০০৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জরুরি সরকারের সময়ে কোনো জনবল নিয়োগ ছাড়াই শুরু হয় চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।  

চিকিৎসা সেবার জন্য এ হাসপাতালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের পালাক্রমে ডেপুটেশনে যাওয়ার কথা থাকলেও চিকিৎসকের  সময়মতো দেখা মেলে না।

এ হাসপাতালটি মুখ থুবড়ে পড়ায় চিকিৎসার জন্য প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাদেরকে আসতে হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।  

অথচ চরাঞ্চলের অষ্টধর, বোরোরচর, পরানগঞ্জের চর সিরতা, চর ঈশ্বরদিয়া ছাড়াও ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার মানুষের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রধান ভরসা হওয়ার কথা ছিল এ হাসপাতালই।  

এখানে গর্ভবতী চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে গত দুবছর আগে মারা যান বেগম নামে এক নারী, এমন তথ্য জানান স্থানীয় পরানগঞ্জ ইউনিয়নের চর বওলা গ্রামের দেলোয়ার ও বাহা উদ্দিন।

একই গ্রামের আবুল হোসেন, মিয়া আলী (৮০), আলিমুদ্দিন (৭০), মো. মিন্নত আলী, ক্ষুদে ব্যবসায়ী ফজর আলী অভিযোগ করে জানান, ‘এ হাসপাতালে ছিল এক্সরে মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।  

 ক্ষোভ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, ‘এই হাসপাতালে বিছানা (শয্যা) নাই। এইটাকে অহন আর আমরা হাসপাতাল মনে করি না।  সকাল ১১ টায় মাঝে মধ্যে চিকিৎসক আসেন। দুপুর দেড়টার মধ্যে চলে যান। শুক্রবার আবার হাসপাতাল খোলা হয় না। এমন হাসপাতাল আমাদের দরকার নেই। ’ 

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম  জানান, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সুদৃশ্য ভবন হলেও ওষুধ, শয্যা ও খাবারের কোনো বরাদ্দ নেই। তবে, প্রতিদিনই এখানে চিকিৎসক থাকেন। মানুষজন যাতে ন্যূনতম ওষুধ পান সেই চেষ্টা করছি।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহজাহান কবির জানান হাসপাতালের কোয়ার্টারগুলি দীর্ঘদিন যাবত অব্যবহৃত থাকায় সেগুলি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অবস্থানের জন্য কোয়ার্টারগুলি মেরামত করা প্রয়োজন। এখানে উল্লেখ্য যে, স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ জেলা বরাবরে তিনি কয়েকবার হাসপাতালে ভবন এবং আবাসিক কোয়াটার বৈদ্যুৎতিক লাইনসহ মেরামত ও সংস্কার করনের জন্য তাগিত পত্র দেওয়া হয়, কিন্তু প্রতিবারই স্বাস্থ্য প্রকৌশলী, ময়মনসিংহ জানান যে এ খাতে প্রাপ্ত বরাদ্ধ নাই।

ডাঃ মোঃ শাহজাহান কবির আরো জানান, ২০শয্যা হাসপাতালটি ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থিত। হাসপাতালের সকল কার্যক্রম (বহিঃ বিভাগ, জরুরী বিভাগ ও আন্তঃ বিভাগ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম) পরিচালনার কাজে নিয়োজিত সকল চিকিৎসক, সিনিয়র স্টাফ নার্সগণ এবং কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিরাপত্তার স্বার্থে একটি আনসার ক্যাম্প স্থাপন সহ পর্যাপ্ত উল্লেখিত আনসার সদস্য মোতায়েন করার ব্যবস্থা গ্রহন করা একান্ত প্রয়োজন।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer