Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

ভাদ্র ২৩ ১৪৩১, রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করায় মমতাকে সংবিধানের পাঠ দিলেন জয়শংকররা

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২৬ জুলাই ২০২৪

প্রিন্ট:

বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করায় মমতাকে সংবিধানের পাঠ দিলেন জয়শংকররা

ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানানোর পর সেটার পরিপ্রেক্ষিতে মমতার কথায় উষ্মাপ্রকাশ করল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। সাউথ ব্লকের তরফে জানানো হয়েছে, বৈদেশিক বিষয়ে পদক্ষেপ করার কোনো অধিকার রাজ্যকে দেয়নি সংবিধান। বিষয়টি একান্তভাবে ভারত সরকারের হাতে আছে। তাই অহেতুক বৈদেশিক বিষয় নিয়ে কোনো রাজ্যের নাক গলানোর কোনো প্রয়োজন নেই বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

এর মাধ্যমে মমতার মন্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ যে আপত্তি জানিয়েছে, তাও স্বীকার করে দিল ভারত। গতকাল বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এসব কথা বলেন।

বিফ্রিংয়ে রণধীর বলেন, আমি নিশ্চিত করতে পারছি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর করা মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের থেকে আমরা একটি কূটনৈতিক নোট পেয়েছি। আপনারা মিডিয়া রিপোর্টে যেমনটা দেখেছেন, খানিকটা সেরকমই নোট পাঠানো হয়েছে। 

সেই রেশ ধরেই এস জয়শংকরের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ভারতের সংবিধানের সপ্তম তফসিলের প্রথম তালিকার ১০ নম্বর ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় এবং অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে একমাত্র ভারত সরকারের অধিকার আছে। 

মুখপাত্র আরো বলেন, এই বিষয়টি যৌথ তালিকায় নেই। আর অবশ্যই রাজ্যের তালিকায় নেই। আমাদের অবস্থানটা স্পষ্ট, সাংবিধানিক এখতিয়ারের বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। 

রণধীর বলেন, বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে আমরা আশা করছি, ওই দেশের পরিস্থিতি খুব শীঘ্রই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ওই দেশের সঙ্গে আমরা উষ্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। সেই সঙ্গে তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৬ হাজার ৭০০-র বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী ফিরে এসেছেন। আর সেটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের দারুণ সহযোগিতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন আর তার পরে সহিংসতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার একটি মন্তব্য নিয়ে ঢাকা থেকে ভারত সরকারের কাছে আপত্তি জানানো হয়েছিল। কলকাতার এক জনসভায় গত রবিবার মমতা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন। 

তবে এর আগে তিনি এটাও বলে নিয়েছিলেন, আমি বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কথা বলতে পারি না কারণ ওটা একটা আলাদা দেশ। যা বলার ভারত সরকার বলবে। কিন্তু আমি এটুকু বলতে পারি, অসহায় মানুষ যদি বাংলার দরজায় খটখটানি করে আমরা তাদের আশ্রয় নিশ্চয়ই দেব। তার কারণ এটা ইউনাইটেড নেশনসের একটা রেজলিউশন আছে যে কেউ যদি রিফিউজি হয়ে যায় তাকে পার্শ্ববর্তী এলাকা সম্মান জানাবে, সেদিনের ভাষণে বলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান। ওই ভাষণ শুনে বিশ্লেষকদের মনে হয়েছিল যে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশ থেকে বহু সংখ্যক উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে পারেন, এরকম একটা ইঙ্গিত মমতা দিয়েছিলেন। 

এছাড়া তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যেন কোনো প্ররোচনা, উত্তেজনায় না যাই। আমাদের সহমর্মিতা, আমাদের দু:খ, সে যারই রক্ত ঝরুক, তাদের জন্য আছে। আমরা দুঃখী, আমরাও খবর রাখছি। ছাত্রছাত্রীদের মহান প্রাণ, তাজা প্রাণগুলো চলে যাচ্ছে। সেদিনই বিকেলে মমতা একটি টুইট করেন, যাতে লেখা হয় ‘বাংলাদেশ থেকে কয়েকশো ছাত্র এবং অন্যান্যরা পশ্চিমবঙ্গ আর ভারতে ফিরে আসছেন। আমি রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে তাদের সব রকম সাহায্য সহযোগিতা করা হয়’। 

এরপরেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপন করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরছে’ এমন টুইট প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, তার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বলতে চাই, তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার, ঘনিষ্ঠ এবং উষ্ণ। কিন্তু তার এই বক্তব্যে বিভ্রান্তির সুযোগ রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ভারত সরকারকে নোট দিয়ে জানিয়েছি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে ওই নোট পাঠানো হয়েছে। আবার মমতা ঠিক কী বলেছিলেন, সেটা পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর সিভি আনন্দ বোসও জানতে চেয়েছিলেন।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer