ফাইল ছবি
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আজ বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৭০ আসনের এই নির্বাচন একদিনেই সম্পন্ন হবে, আর শনিবার প্রকাশিত হবে ফলাফল। এবারের ভোটে দিল্লির ক্ষমতায় আম আদমি পার্টি (আপ) টানা চতুর্থবার আসবে, নাকি ২৭ বছর পর বিজেপি ক্ষমতায় ফিরবে, তা নিয়েই জোর আলোচনা চলছে।
বিজেপি এবার আপকে হারাতে শক্ত পরিকল্পনা নিয়েছে। বিশেষ করে আবগারি (মদ) দুর্নীতির মামলায় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে চাপে ফেলতে তারা চেষ্টা চালিয়েছে। কেজরিওয়ালসহ সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন এবং সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং এই মামলায় কারাবন্দি হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত। কংগ্রেসও এবার কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে, যদিও তারা ইন্ডিয়া জোটের শরিক। এই নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বলে মনে করা হচ্ছে।
গত দুটি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একটিও আসন পায়নি, আর তাদের ভোটের হার কমে দাঁড়িয়েছে শুধু ৪.৫ শতাংশে। এবার তারা নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। ফলে এই ভোট ত্রিমুখী লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে, যা বিজেপির জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। কারণ, আপ ও কংগ্রেসের ভোট বিভক্ত হলে বিজেপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তবে যদি কেজরিওয়ালের দল জিতে যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য এটি হবে বড় পরাজয়। ২০১৫ ও ২০২০ সালের মতো ২০২৫ সালেও দিল্লি বিজেপির হাতছাড়া হলে, মোদির জন্য এটি টানা তৃতীয় পরাজয় হয়ে দাঁড়াবে।
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই বিজেপির প্রধান প্রচার মুখ। যদিও আম আদমি পার্টি এখনো আত্মবিশ্বাসী। প্রচারণা শেষে কেজরিওয়াল বলেছেন, ভোট এবার হাড্ডাহাড্ডি হবে, তবে তার দলই জিতবে। তিনি দাবি করেছেন, ৫৫টির মতো আসন পাবে আপ, আর নারীরা দল বেঁধে ভোট দিলে সংখ্যা ৬০-এও পৌঁছাতে পারে
আম আদমি পার্টির উত্থান শুরু হয় ২০১২ সালে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে ২৮টি আসন পেয়ে কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার গড়ে। তবে ৪৯ দিন পর কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। এক বছর রাষ্ট্রপতির শাসনের পর ২০১৫ সালের নির্বাচনে আপ ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে। ২০২০ সালের ভোটেও ৬২টি আসন নিয়ে আপ জয়লাভ করে, আর বিজেপি পায় মাত্র ৮টি আসন।
দিল্লির জনগণের মন জয় করতে কেজরিওয়াল বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ, ২০ হাজার লিটার পানি এবং নারীদের বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসযাত্রার সুযোগ দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য মহল্লা ক্লিনিক চালু করেন। এছাড়া, নারীদের জন্য প্রতি মাসে ১,০০০ রুপি ও বয়স্কদের সরকারি খরচে তীর্থযাত্রার সুযোগও চালু করেন
কেজরিওয়ালের এই নীতিগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি দান-খয়রাতের রাজনীতি বন্ধ করার পক্ষে ছিলেন। তবে এবার নির্বাচনের প্রচারে মোদিও বিনামূল্যে নানা সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কংগ্রেসও একই পথে হাঁটছে। তাই এখন দিল্লির ভোটাররা কাকে বেছে নেবেন, সেটাই দেখার বিষয়।