ছবি: বহুমাত্রিক.কম
বাংলােদেশর অগ্রগতিতে একাত্তরের মতোই ভারত পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদ আয়োজিত ‘মৈত্রীর চেতনায় যেতে হবে বহুদূর’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই প্রত্যয় জানান।
ভারতীয় হাই কমিশনার বলেন, ‘যেমন করে ভারতের জনগণ একাত্তরে বাংলাদেশের নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভবিষ্যতে এদেশের অগ্রগতিতেও পাশে থাকবে ভারত। ঘনিষ্ট উন্নয়ন সহযোগি হিসেবে সম্বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফিজিক্যাল কানেক্টেভিটি, এনার্জি কানেক্টিভিটি, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি, ইকনোমিক কানেক্টিভিটির সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও দু’দেশের নাগরিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি। এই বহুমাত্রিক সম্পর্ক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলায়, খাদ্যনিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসুরক্ষা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশকে একযোগে কাজ করে যেতে উৎসাহিত করছে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ-ভারতের সহাবস্থানের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রণয় ভার্মা বলেন, গ্লোবাল সাউথের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা সম্পর্কে এক সঙ্গে বিশ্বকে নাড়া দিতে পেরেছে ভারত ও বাংলাদেশ। জনগণের মধ্যে যোগোযোগ বাড়াতে এখন ডিজিটাল যোগাযোগও বাড়াচ্ছে দু’দেশ।
সেমিনারের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে দু’দেশের সম্পর্কের উচ্চতাকেই বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উন্নয়নের মেলবন্ধন সৃষ্টিতে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। টেকসিই উন্নয়ন ও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে আমাদের অখণ্ড গৌরব ও সাংস্কৃতিক সম্পদের পুর্জাগরণ ঘটাতে নানামাত্রিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্মিলন ঘটােনো জরুরি হয়ে পড়েছে। একাত্তরের মতোই দু’দেশের জনগণের নৈকট্য বৃদ্ধি করতে এসব প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই।’
ড. রহমান আরও বলেন, ‘ঢাকা-দিল্লি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, যা অনেকের জন্যই ঈর্ষণীয়। ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পুঁজিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের আরও উচ্চতায় পৌঁছানো সম্ভব। বাণিজ্যিক সম্পর্কের সম্প্রসারণে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উন্নয়ন সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাবে।’
সেমিনারের আলোচক বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) আবদুর রশিদ বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ১৯৭১ সালে বিশ্বের অনেক দেশের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত। এটি পাস করতে ভারতের পার্লামেন্টে কোন বিরোধিতা ছিল না। আবার স্থলসীমান্তের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে সহ্য করতে পারে না। ধর্মের একটা আবরণ দিয়ে সুসম্পর্ককে নষ্ট করার তৎপরতা দৃশ্যমান।’ তিনি বলেন, প্রতিবেশী হিসেবে অমীমাংসিত ছোট ছোট ইস্যুকে সমাধান করার ওপর জোর দিতে হবে। এতে করে বাড়তে থাকা বিপক্ষ শক্তি শিকড় গাঁড়তে পারবে না।’
সেমিনারে নির্বাচিত বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের সাধারণ আশরাফুল ইসলাম। তিনি প্রবন্ধে বলেন, ‘সমকালীন বিশ্বে তো বটেই গত শতাব্দির বিশ্ব সমীকরণের মারপ্যাচ ডিঙিয়ে এই শতাব্দির দুই দশকও পেরিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ভাতৃত্বপূর্ণ বিরল সম্পর্কের সমান কোন উদাহরণ আজও সৃষ্টি হয়নি! নিন্দুকদের ভাষ্যে এনিয়ে যতো কথাই হোক না কেন, দুই দেশের মৈত্রীময় সম্পর্কের দৃষ্টান্তে আজও কেউ সমকক্ষ হতে পারেনি, এ কথা জোর দিয়েই বলা যাবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন-স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট চিকিৎসক ও মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, আয়োজক সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া ও সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তাপস হোড়। সেমিনারে গণমাধ্যম সহযোগী ছিল বহুমাত্রিক.কম।
এদিন সকালে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের মাল্টিপারপাস হলে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে শুরু হয় ‘মৈত্রীর চেতনায় যেতে হবে বহুদূর’ শীর্ষক সেমিনার। সঙ্গীত শিল্পী ও সংগঠন অলক দাশগুপ্তের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক সংগঠন সৃষ্টির শিল্পীরা এতে অংশ নেন। একক দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন কলকাতার জনপ্রিয় শিল্পী টিনা ঘোষাল ও ঢাকা শিল্পী বর্ষা রাহা।