Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

ফাল্গুন ৭ ১৪৩১, শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়’

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রিন্ট:

‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়’

ফাইল ছবি

ওমানের রাজধানী মাসকাটে অষ্টম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের (ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স) ফাঁকে রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাক্ষাৎ হয়। এতে তারা দুই দেশের সম্পর্কে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, সেগুলোর সমাধানে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এছাড়া ওই সাক্ষাতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আগামী এপ্রিলে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ হতে পারে বলে জানান। 

এরপর দিনই সোমবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতীয় সাংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে একটি সাক্ষাতকার দেন। এতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়। 

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উত্তজনাকর সম্পর্কের মধ্যে এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাতকারের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কের একটি ধরনে অভ্যস্ত ছিল এবং হঠাৎ করেই দ্রুত তা ভেঙে পড়ে। হয়তো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে, সে কারণে সম্পর্কে অনেক বৈরী মনোভাব এবং অস্বস্তি অবশ্যই ছিল। কিন্তু আমার মনে হয় ছয় মাসের মাথায় সেটা আসলেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত।

তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, যা ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। যেমন বাণিজ্যে অল্প সময়ের জন্য মন্দা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু আবার তা চাঙা হয়ে উঠেছে। সুতরাং এগুলো ইঙ্গিত দেয় যে দুই দেশ, অন্তত বেসরকারি খাতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় এবং এতে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের আগ্রহ আছে। উভয় দেশেরই একে অপরের কাছে স্বার্থ রয়েছে এবং আমাদের তার প্রতি যত্ন নেয়া দরকার।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিম বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মতোই সমান নাগরিক। তারা সম–অধিকার এবং একই রকম সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। এবং এটা বাংলাদেশ সরকারের কাজ, তারা এটা করছে, দেশের অন্য যেকোনো নাগরিকের মতোই তাদের (সংখ্যালঘুদের) সুরক্ষা দেওয়া। 

কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর ভারতীয় মিডিয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে প্রায় ব্যাখ্যাতীত উন্মাদনা সৃষ্টি করা হয়, যার বেশির ভাগই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাওয়া প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা ভারতকে বলেছি। যতক্ষণ না ভারত সরকার সেটা না করছে, আমরা আশা করব, তারা অন্তত তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, যাতে তিনি এমন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও মিথ্যা বক্তব্য না দেন। 
শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একটি মব (বিশৃঙ্খল জনতা) কিছু করতে পারে, কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।

সীমান্তে বিএসএফএর বাড়াবাড়ি সম্পর্কে তৌহিদ হোসেন বলেন, ২০২৪ সালে সীমান্তে ২৪ জনকে গুলি করা হয়েছে, যার অর্ধেক বিগত সরকারের আমলে। বিশ্বের আর কোথাও এটা হয়নি। আমি মনে করি, আপনি আমার সঙ্গে এই বিষয়ে একমত হবেন। কারণ, ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়, যেহেতু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়, সে কারণে এটা ঘটছে। বিশ্বের প্রতিটি সীমান্তেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়, কিন্তু কোথাও মানুষকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় না। যদি অপরাধ ঘটে, আপনি তাদেরকে গ্রেপ্তার করুন এবং আদালতে নিয়ে যান। কারাদণ্ড হোক বা আদালত যেকোনো রায় দিতে পারেন। কিন্তু আপনি তাঁকে হত্যা করতে পারেন না। আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি যে, আমরা দুটি পর্যায়ে আলোচনা করি, একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে, (এবং দ্বিতীয়ত) চুক্তি স্বাক্ষরের পরে। আমাদের চুক্তি অনুসারে এগোতে হবে। কিন্তু যদি আমরা মনে করি, এটা সঠিকভাবে করা হয়নি তাহলে আমরা সর্বদা পারস্পরিকভাবে এটা আবার খতিয়ে দেখার জন্য সম্মত হতে পারি। আমার মতে, আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে এটা দেখব এবং এটাকে আরও যৌক্তিক করার চেষ্টা করব। 

শেখ হাসিনার আমলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক যেভাবে ছিল সেই অবস্থায় আবার ফিরতে কিনা এমন প্রশ্নে জয় শঙ্কর বলেন, আমরা শুধু গত ১৫ বছর কেন দেখব? এমনকি বিএনপির আমলেও (১৯৯৬-২০০১) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমার মনে হয় না, সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হতে হবে। ১৯৯৬-১৯৯৭ এ আমাদের গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল। তাই আমি মনে করি, আমাদের দুই দেশের রাজধানীতে যে সরকারই হোক, যে দলই ক্ষমতায় থাক না কেন, তা আমাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলা উচিত নয়। কারণ সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল। 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer