
ফাইল ছবি
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আরও সতর্ক। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতায় বসবাসকারী পাকিস্তানি নাগরিকদের কার্যকলাপের উপর বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর। বিশেষ করে ‘লং টার্ম ভিসা’ (এলটিভি) নিয়ে কলকাতায় বসবাস করা পাক নাগরিকদের গতিবিধির দিকে কড়া নজর দেয়া হচ্ছে।
সার্ক ভিসা বা ‘এসভিইএস’ নিয়ে যে পাকিস্তানিরা দেশে রয়েছেন, বুধবারই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সার্ক ভিসা রয়েছে, এমন পাকিস্তানির সন্ধান চলছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কলকাতায় এরকম কোনও পাকিস্তানি রয়েছেন কি না, তা নিয়ে ধন্দে গোয়েন্দারা। কিন্তু ‘লং টার্ম ভিসা’ নিয়ে যে কলকাতায় পাকিস্তানের বাসিন্দারা রয়েছেন, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের সূত্র জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ‘লং টার্ম ভিসা’ বা ‘এলটিভি’ নিয়ে ৩০ জন পাকিস্তানি রয়েছেন কলকাতায়।
তাদের মধ্যে একটি বড় অংশই গৃহবধূ। যারা ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহসূত্রে কলকাতায় এসে বসবাস করছেন। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে আসা একজন নাগরিককে প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য এলটিভি দেওয়া হয়, পরে সেই ভিসার মেয়াদ এক বা দু’বছরের জন্য বাড়ানো হয়। তবে প্রতিবার ভিসা নবীকরণের সময় সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরে গিয়ে রিপোর্ট করতে হয়।
এই রিপোর্টিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গোয়েন্দারা তাদের চলাফেরা, যোগাযোগ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা করার চেষ্টা করেন। এমনকি তাদের ভিসা নবীকরণের জন্য গোয়েন্দা বিভাগ থেকে সুপারিশও প্রয়োজন হয়। এর ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই তারা গোয়েন্দাদের নজরে আসেন। তবে বর্তমানে গোয়েন্দারা শুধু এই প্রশাসনিক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না। পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনার পর তারা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
বিশেষ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, এই পাক নাগরিকরা কাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সূত্র অনুযায়ী, এই গৃহবধূদের অনেকেই তাদের বাপের বাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেন—যা স্বাভাবিক এবং মানবিক।
তবে গোয়েন্দারা এর বাইরেও খোঁজ নিচ্ছেন, পাকিস্তানের অন্য কোনও নাগরিকের সঙ্গে তাদের বা তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের যোগাযোগ রয়েছে কি না। এ ক্ষেত্রে শুধু আত্মীয়তার খাতিরে যোগাযোগ হচ্ছে, না এর পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে, তা জানতেই তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দারা। এমনকি ওই পাক নাগরিকদের মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপরেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে যে বা যারা যোগাযোগ করছে, তাদের পরিচয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, প্রয়োজনে এই পাক নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরি কথাবার্তাও বলা হতে পারে। তাদের আশপাশের মানুষজন, যারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বা নিয়মিত মেলামেশা করেন, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হতে পারে।