ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইউক্রেনের জ্বালানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অভিযানে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
উভয় পক্ষের বাহিনী পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেন ফ্রন্টে স্থল অভিযানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছাড়াই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান কেন্দ্র খেরসনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মস্কো সমুদ্র পথে নিরাপদে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানির অনুমতি দিয়ে একটি চুক্তিতে ফিরে আসার পর বিশ্ব বাজারে ইউক্রেনের শস্যের চালান আবার শুরু হয়েছিল। জেলেনস্কি তার দৈনিক ভাষণে বলেছেন, ‘আজ রাতে প্রায় ৪৫ লাখ গ্রাহকের সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া যে জ্বালানি সন্ত্রাসের আশ্রয় নিচ্ছে এতে আমাদের শত্রুর দুর্বলতা বোঝা যায়। তারা ইউক্রেনকে যুদ্ধক্ষেত্রে হারাতে পারে না, তাই তারা এভাবে আমাদের জনগণের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে।’
স্পষ্টতই শীতের ঠান্ডা সময়ে ইউক্রেনের জনসাধারণ এবং এর প্রতিবেশীদের মধ্যে যুদ্ধের বিরুদ্ধে মনোভাব জাগিয়ে তোলার আশায় কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিস্ফোরক ড্রোন বর্ষণ করেছে।
গত মাসে রাশিয়ার হামলায় দেশটির প্রায় এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার ইউক্রেনীয়দের যতটা সম্ভব বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বান জানিয়েছে।
গ্রুপ অফ সেভেন শিল্পোন্নত দেশগুলোর বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আগে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, জি-৭ ইউক্রেনকে শীত থেকে বাঁচতে জেনারেটর এবং হিটারসহ বিভিন্ন আইটেম দিয়ে সাহায্য করবে৷
রাশিয়া একদিনের বিরতির পর ইউক্রেন থেকে শস্য এবং অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী রপ্তানির অনুমতি দেওয়া আবার শুরু করেছে। ক্রিমিয়াতে রাশিয়ান জাহাজের উপর ইউক্রেনের বিমান এবং সমুদ্র ড্রোন হামলার পর চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো।
জাতিসংঘ বৃহস্পতিবার বলেছে, বাণিজ্য পুনরায় শুরু হওয়ার পর সাতটি জাহাজ কৃষ্ণ সাগরের শিপিং করিডোর দিয়ে ট্রানজিট করছে। কিন্তু মস্কো বলেছে, জাতিসংঘ এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় চুক্তির নবায়নের তারিখ ১৯ নভেম্বরের পর শস্য চুক্তিটি বাড়ানো হবে কি-না তা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
জাতিসংঘের বাণিজ্য আলোচক রেবেকা গ্রিনস্প্যান বৃহস্পতিবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ‘আশা করেন উভয় পক্ষ দায়িত্বশীল হবেন এবং কৃষ্ণ সাগর দিয়ে নিরাপদে শস্য রফতানির উদ্যোগ প্রসারিত হবে।’
ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ খাদ্যশস্য উৎপাদকদের মধ্যে একটি এবং জুলাই মাস পর্যন্ত নিরাপদে রফতানি চুক্তিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার আক্রমণের পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের বন্দরে ২০ মিলিয়ন টন শস্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত খেরসনে ক্রমবর্ধমানভাবে যুদ্ধের ঝুঁকির মধ্যে রাশিয়া বৃহস্পতিবার এই অঞ্চলে বসবাসকারী নাগরিকদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের নিন্দা করেছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘রুশ দখলদার প্রশাসন খেরসন অঞ্চলের বাম-তীরের বাসিন্দাদের ব্যাপকভাবে জোরপূর্বক স্থানান্তর শুরু করেছে।’
‘জাপোরিঝিয়া, লুগানস্ক এবং দোনেস্ক অঞ্চলের পাশাপাশি ক্রিমিয়াতেও রাশিয়া একই ধরনের নির্বাসন চালাচ্ছে।’