কেশব রঞ্জন সরকার, ছবি- সংগৃহীত
আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল সম্পর্কে জনবিচ্ছিন্নতা ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনলেন দলের সহযোগি সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক নেত্রকোণা জেলা সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার। বহুমাত্রিক.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব অভিযোগ আনেন তিনি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কৃষক লীগের এই নেতা মনে করেন, দলের জন্য তাঁর সুদীর্ঘ অবদানের স্বীকৃতি দেবেন দলীয় প্রধান। সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ প্রকাশিত হচ্ছে-
বহুমাত্রিক.কম: আপনি নেত্রকোণার কেন্দুয়া-আটপাড়া আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আপনাকে দল কি কারণে মনোনয়ন দেবে বলে মনে করেন?
কেশব রঞ্জন সরকার: প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর থেকেই দলের প্রতিটি কর্মসূচি তৃণমূল পর্যায়ে পালন করে আসছি আমি। আমি ৩৭ বছর নেত্রকোণা জেলা কৃষকলীগের সভাপতি-সম্পাদক ও ৪০ বছর কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য হিসেবে সংগঠনের জন্য কাজ করছি। আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল কেন্দুয়া-আটপাড়ার মানুষের সমর্থন ও দলের স্কীকৃতি নিয়ে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত হব এবং জনগণের সেবা করব। এই সেবার মনোভাবটা আমার আগেই ছিল। আমার নির্বাচনী এলাকায় ২৯টি দলীয় কার্যালয় স্থাপন করেছি। একটি করে টিভি, ৪০টি করে চেয়ার, টেবিল এবং দলীয় ও জাতীয় পতাকা, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ বইপুস্তক অফিসগুলোতে দিয়েছি। শুধু কৃষকলীগের অফিস নয়, আওয়ামীলীগের অফিসও করেছি। দলীয় অফিস করাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আওয়ামীলীগের সম্পর্ক আরও নিবিড় হলো, গণসংযোগ তৈরি হলো। আমি দেখলাম, শুধু দলীয় অফিস দিয়ে মানুষের উন্নয়ন করা যাবে না যদিও আমি এমপি না। আমি নেত্রীর অনুমতি নিয়ে আটপাড়ায় কৃষক সমাবেশের আয়োজন করেছিলাম। সেখানে কৃষককের কল্যাণে ২১ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু দেখা গেল দলীয় এমপিরা ডিও লেটার দিয়ে এলাকার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হন নাই। এই সুযোগটা আমি নিলাম। আমি গণভবনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আপনি আমার এলাকায় যে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন, এমপি সাহেবরা ডিও লেটার দেয় না, আমি কী করব? বললাম, আমি একটা চিঠি দিয়েছিলাম, আপনি যদি নির্দেশনা দেন তবে এলাকার উন্নয়নকাজ সহজ হয়। আমি কাজ বের করে দিলাম, নেত্রী সঙ্গে অর্ডার দিয়ে দিলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি হলো। এতে ৩টি ব্রিজ সহ ৮০ কোটি টাকার কাজ ডিপিপি হয়ে শুরু হয়। আমি কিন্তু ঠিকাদার, ব্যবসায়ী নই। আমার বাবার পর্যাপ্ত কৃষি জমি ছিল। এই জমির ফসলি উৎপাদন দিয়েই আমি মানুষের সেবা করি। অন্ততঃ ২০ একর জমি বিক্রি করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি। কারও থেকে ধার নিই নাই। এক টাকা কালেকশন করি নাই, যা নেত্রী নিজেই জানেন। বিভিন্ন সময় আমি দলের শীর্ষ নেতাদের এলাকায় নিয়েছি, এভাবে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। মাননীয় নেত্রীর বরাদ্দের পর আমি সাহস পাইছি।
বহুমাত্রিক.কম: আপনার আসনটিতে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বর্তমানে সংসদ সদস্য। আপনার মনোনয়ন চাওয়ার যৌক্তিকতা কি?
কেশব রঞ্জন সরকার: অসীম কুমার উকিল একেবারে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। নেত্রী বলেছেন, যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তাদের দলীয় মনোনয়ন দিবেন না। এই সুযোগটা আমার আছে। ইতিপূর্বে আমি মনোনয়ন না পেলেও উন্নয়নমূলক কাজ করে গেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত উন্নয়ন ও অর্জন জনসমক্ষে তুলে ধরতে উঠান বৈঠক করেছি। আমাকে সবাই চেনেন, কেউ বাকী নাই যারা চেনেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড় দেবেন না। আমার এলাকার এমপি যে দুর্নীতি করেছেন, ৩৭টি ফ্ল্যাট ঢাকাতে আছে। রাজউক নীতিমালা ভঙ্গ করে দুটি প্লট তার নামে বরাদ্দ করলো। দেশে-বিদেশে প্রচুর অবৈধ সম্পদের মালিক তিনি। বিপরীতে আমি নিজের পৈত্রিক সম্পদ বিক্রি করে রাজনীতি করি। পার্থক্য এখানেই। আমি আওয়ামীলীগের সংগ্রামী ঐতিহ্যকে লালন করি।
বহুমাত্রিক.কম: অসীম কুমার উকিলের বিরুদ্ধে আপনি বিভিন্ন সময়ে সরব হয়েছেন। এর কারণ কি ব্যক্তিগত?
কেশব রঞ্জন সরকার: তিনি হিন্দু সমাজেরও গর্বের বিষয় ছিলেন। কেন্দুয়ার নোয়াপাড়ায় একটি আশ্রম আছে। আশ্রমের ৫ একর জমি বেদখল হলো। বিএনপির লোকজন ঘর করলো। অথচ এই জমি উদ্ধারে তার কোন আন্তরিকতা পাওয়া যায়নি। আমরা নেতৃবৃন্দরা মিলে অনেক কষ্টে জায়গাটি উদ্ধার করেছি। অবিভক্ত ভারতের অর্থমন্ত্রী নলিনী সরকারের বাড়ির আশ্রমটির জন্য উনার কাছে বাবার বার আবেদন করলেও তিনি কোন বরাদ্দ দেননি। বাড়িটি তিনি সংরক্ষণ করেননি। আপনি অবাক হবেন, আটপাড়ার কামারগাতি একটি মেয়ে ধর্ষিতা হলেন, মামলাও হলো। তার হস্তক্ষেপে মামলাটা তুলে নিতে হয়। মেয়েটিকেও ধর্মান্তর করা হয়। আরেক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর অপহরণকারীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে আসামীকে রক্ষা করেন। আটপাড়ার কলেজ শিক্ষক মানিক সাহার জমি উদ্ধারে তার কাছে বহুবার গেলেও উদ্ধারে ভূমিকা নেন নাই। বরং যারা দখলকারী তারা এমপির বাড়িতে চা খান। এমন অসংখ্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। আমি দলের ও জনগণের জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, কারণ তিনি একজন জনস্বার্থবিরোধী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
বহুমাত্রিক.কম: কমিটি গঠন নিয়ে আপনি অসীম কুমার উকিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিলেন। কি অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে?
কেশব রঞ্জন সরকার : উনি জেলা ও থানা আওয়ামীলীগের পকেট কমিটি করেছেন জনবিচ্ছিন্ন লোকদের নিয়ে । ৩৭ বছর রাজনীতি করলেও আমাকে সদস্য রাখতেও দেননি তিনি। আমার মতো যারা তৃণমুলের আছেন, কাউকেই তিনি কমিটিতে নেন নাই। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সুপারিশ করান। নেত্রীর প্রতি তার আস্থা নেই।
আমাকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, আমার জানা আছে কিভাবে উন্নয়ন করতে হয়। আমি সেবক হব, জনগণের এমপি হব। সামাজিক বিপ্লব করতে চাই। অসীম উকিল উনার দল বানান, আমি এমপি হলে দলের ও জনগণের এমপি হব। কোন বৈষম্য থাকবে না। কোন দল করলাম তা বিবেচনা করব না। সবার জন্য কাজ করব।