ফাইল ছবি
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের ঘটনায় জরুরি ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে বিগত বছরের মতো ইজতেমা চালু রাখা, দুই গ্রুপের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং কাকরাইল মসজিদের ভেতরে আবাসিক ব্যবস্থা বন্ধ করারও আর্জি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও জাতীয় দুর্যোগময় মুহূর্তে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সমন্বয়মূলক সংগঠন আল-কুরআন স্টাডি সেন্টার সুপ্রিম কোর্ট বার এর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ উজ-জামান ও অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বিবদমান সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ও উভয় পক্ষ (জুবায়ের ও সাদ) পন্থিদের পাঁচ পাঁচ জন ব্যক্তিকে রাখার জন্যে বলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তাবলীগ জামাতের দুটি অংশ জুবায়ের ও সাদপন্থিদের চলমান দ্বন্দ্ব আবারও সংঘাতে রূপ নিয়েছে। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে ৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।
এর আগে ২০১৮ সালে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও পাঁচ হাজার মানুষ আহত হয়েছিল। তবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মার্কাজ ঢাকার কাকরাইল মসজিদের দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দু’পক্ষের সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি ২০১৭ সাল থেকে প্রতি মাসেই দুবার পালাক্রমে দু’পক্ষের মধ্যে দখল বেদখল চলছে।
এমনকি টঙ্গীতে তাদের ইজতেমা কেন্দ্র করে গত কিছুদিন ধরেই সড়ক অবরোধ, প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়াসহ নানান কর্মসূচির মাধ্যমে কাকরাইল মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ সমূহের পরিবেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে। এমনকি পক্ষ-বিপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা মামলা-মোকদ্দমার মাধ্যমে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে
নোটিশে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে তাবলিগ জামাতের চলমান এ দ্বন্দ্ব সংঘাতের ঘটনায় সবাই আতঙ্কিত। ঘটনা যেভাবে চলমান তাতে মনে হয় ভবিষ্যতে আরও সংঘাত ও রক্তাক্ত ঘটনা ঘটতে পারে। মসজিদের পরিবেশ আরও কলুষিত হতে পারে। তাই সুপ্রিম কোর্টের আল-কুরআন স্টাডি সেন্টার তৌহিদী জনতাকে এমন ষড়যন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর। এবং এই মুহূর্তে তাদের সাহায্যে সরকারের এগিয়ে সমস্যা নিরসনে বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে সরকারের উচিত হবে
১। তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ পন্থি ও জুবায়ের পন্থিদের দু’পক্ষই বিশ্ব ইজতেমা গত বারের মতো আলাদাভাবে করার লক্ষ্যে দু’পক্ষের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামি ফাউন্ডেশনের বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিবর্গ (৫+৫+৫) নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের লিয়াজোঁ কমিটি করতে হবে এবং বিশেষভাবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আল-কোরআন স্টাডি সেন্টারের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আহমদকে উক্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং কমিটির প্রধান হবেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
২। তাবলিগ জামাতের মধ্যে বিবদমান দুই পক্ষ দীর্ঘ ৭ বৎসর ধরে দ্বন্দ্ব করে আসছে এবং এক পক্ষ নিজেকে হকপন্থি দাবি করে, অন্যপক্ষকে বাতিল পন্থি বলে প্রকাশ করে। বাংলাদেশের মসজিদ সমূহের মধ্যে পরস্পরের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। তাতে মসজিদের পবিত্র পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে কোনও রকম লিফলেট, পোস্টার ও পত্র পত্রিকায় বিবৃতি এমনকি মসজিদে কারও বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বন্ধ করার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩। তাবলীগ জামাতের বিবদমান দুই পক্ষই কাকরাইল মসজিদের দখল বা নিয়ন্ত্রণ বা আবাসিক হোটেলের মতো যুগ যুগ ধরে বসবাস করাকে তারা বিধিবদ্ধ নিয়ম বলে ধরে নিয়েছেন। মসজিদ বসবাসের জায়গা নয়, ইবাদতের স্থান। তাই আবাসস্থল না বানিয়ে মসজিদকে মসজিদের পরিবেশে ফিরিয়ে আনা, সেই লক্ষ্যে মসজিদের স্থায়ীভাবে বিবাদ মিটানোর লক্ষ্যে দ্রুত ঢাকার ডিসির নেতৃত্বে একটি কাকরাইল মসজিদ কমিটি গঠন করে মসজিদের পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ ব্যাপারে আগামী ৫ দিনের মধ্যে উল্লিখিত শর্তমতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আল-কুরআন স্টাডি সেন্টার হাইকোর্টের দারস্ত হয়ে প্রয়োজনীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আল-কোরআন স্টাডি সেন্টার সুপ্রিম কোর্ট বার এর প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ-উজ-জামান। তিনি জানান, এ সংক্রান্ত বিষয়ে কপি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামী ফাউন্ডেশন এর মহাপরিচালক ডিজি ও ঢাকা জেলা প্রশাসক (ডিসি)।