ফাইল ছবি
মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) আইন-২০০৯ অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা তাৎক্ষণিক কোনো অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধ সংঘটিত হলে ঘটনাস্থলেই অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারেন তারা। বর্তমানে পরিবেশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, শ্রম আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনসহ ১১৬টি আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমলে নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের। অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ স্বীকার করলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড এবং আইনে নির্ধারিত সীমার মধ্যে যে কোনো পরিমাণ অর্থদণ্ড আরোপ করতে পারেন। কিন্তু বিচারের মৌলিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণ না করেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দুই বছরের কারাদণ্ড আরোপ করার বিধান রহিত করার সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন।
সংস্কার কমিশন তার প্রতিবেদনে বলেছে, মোবাইল কোর্ট আইনের মাধ্যমে একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে (নির্বাহী হাকিম) বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যা নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের নীতির পরিপন্থি। এই আইন অনুযায়ী একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বিচারের মৌলিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণ না করেই অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২ (দুই) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড আরোপ করতে পারেন, যা সংবিধানের ৩২, ৩০ ও ৩৫ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পক্ষান্তরে এর চেয়ে কম দণ্ড আরোপের ক্ষেত্রেও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারের কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের (বিচার বিভাগীয় হাকিমদের) পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিধি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা এবং যেসব পরিস্থিতিতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা যথাযথ ও বাস্তবসম্মত হবে না, শুধু সেই সব ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা বাঞ্ছনীয় বলে সংস্কার কমিশন তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব করতে গত ৩ অক্টোবর আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। এরপর থেকেই কমিশন সরেজমিন বিভিন্ন আদালত পরিদর্শন, মতবিনিময়সহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে। দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার পর বিচার বিভাগের মোট ৩০টি বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে কমিশন।
এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ ও শৃঙ্খলা, অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি, সুপ্রিম কোর্টে আলাদা সচিবালয় স্থাপন, আদালত ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা গঠন, বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি লাঘব, দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, আইনগত সহায়তা কার্যক্রম ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা কার্যকর করা, প্রচলিত আইনের, আইন পেশার ও আইন শিক্ষার সংস্কার, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ, মামলার জট হ্রাস, মোবাইল কোর্ট, গ্রাম আদালতসহ মোট ৩০টি বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন কালবেলাকে বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। বুধবার প্রতিবেদনটি উপদেষ্টা পরিষদের কাছে জমা দেওয়া হবে। কমিশন ৩০টি বিষয়ে আলোকপাত করেছে। একটি সারসংক্ষেপও জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ঐক্য কমিশন এই সুপারিশগুলো নিয়ে কাজ করবে। বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বিচারপতি এমদাদুল হক ঐক্য কমিশনের সঙ্গে কাজ করবে। সুপারিশের মধ্যে কোনগুলো স্বল্পমেয়াদি ও কোনগুলো দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়নযোগ্য, তা বিশ্লেষণ করবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এসব নিয়ে বৈঠক হবে।’