ছবি- সংগৃহীত
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, দেশে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র এসেছে।তিনি বলেন, ‘অনেকে এসব অস্ত্রের নকল লাইসেন্স বানিয়ে নিয়েছে। লাইসেন্সের সত্যতা যেন যাচাই করা হয়। এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বড় আকারে যেন অভিযান চালানো হয়। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকবে। বেআইনি অস্ত্র অ্যালার্মিং।’
রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফংকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সেখানে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে অস্ত্র উদ্ধারের নামে বিরোধী দলের লোকদের ধরা হয়েছে, এখনও সেই রকম অভিযান চালানো হবে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মোজাম্মেল হক বলেন, অস্ত্র যদি না পায় অভিযোগ তো সঠিক হলো না। বিরোধী দলের জন্য (অভিযান পরিচালনা) করা হচ্ছে বলে যে কথা বললেন, সেটি ঠিক না। ধরপাকড় করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে, ওয়ারেন্ট ছিল তাদের। এটা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। আন্দোলনের কারণে কাউকে নতুনভাবে ধরা হয়েছে, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
‘রমজানের আগে হয়তো আর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা হবে না। দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে আমরা কনসার্ন (উদ্বিগ্ন)। ভেজালের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। রমমান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবারহ যাতে ভালো থাকে, সে ব্যাপারে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সভায় সেটি যাতে নিশ্চিত করা হয়,’ বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর অনেকে অনেক দিবাস্বপ্ন দেখেছেন। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত ছিল কী হয়, কী ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলতার সাথে সেগুলো মোকাবিলা করেছে। বরাবরের মতোই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কেউ আক্রান্ত হলে সে তো আত্মরক্ষা করবে। আত্মরক্ষার স্বার্থে মারমুখী হয়, এসব ছবি প্রকাশ করতে হবে। তাদের বলা হয়েছে, এমন কোনো কিছু যাতে না ঘটে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভারমূর্তি যাতে নষ্ট হয়।’
‘মাদক জাতির জন্য সব চেয়ে বড় অ্যালার্মিং ব্যাপার। মাদক কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কলাকৌশল আরও বৃদ্ধি করার জন্য বলেছি। মাদক বিক্রেতা, মাদকসেবী, মাদক পাচারকারীদের তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি করেছে। সচিবের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম) নেতৃত্বে এসব তালিকা ক্রস চেক করে আমরা স্থায়ী তালিকা করব। কারণ অনেকগুলো সংস্থা আছে, তারা তালিকা করবে,’ বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই দুর্বৃত্ত থাকে, তাদের একটি তালিকা থাকে। অতীতের যে তালিকা থাকে, সেটি হালনাগাদ করা হবে। সেই তালিকা সব সংস্থা আলাদা আলাদাভাবে করবে। আমরা সমন্বিতভাবে দেখব। তালিকা প্রকাশ করা যাবে না, সরকারের কাছে থাকবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ও সন্দেহভাজনদের নিয়ে তালিকা তৈরি করা হবে।’
‘সাইবার ক্রাইম যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে তাদের (ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার) বারবার চিঠিপত্র দেয়া হলেও তারা তেমনভাবে সাড়া দেননি। এর প্রধান কারণ হলো দেশে যেহেতু তাদের কার্যালয় নেই, তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। ভুয়া আইডি ব্যবহার করে যারা মিথ্যাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও নেয়া হচ্ছে না,’ বলেন মন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইনানুগভাবে একজন নাগরিক যে প্রতিকার পেতে পারেন, সরকারের বিরুদ্ধে বলছে তা নয়, ব্যক্তি ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তারা মিথ্যাচার করছে। আমরা চাই এসব চ্যানেলের কার্যালয় যাতে বাংলাদেশে হয়।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবার অধিকার আছে, সম্মান আছে, অহেতুক যাতে মিথ্যাচারের শিকার কেউ না হয়। আমরা বলেছি, যারা মিথ্যচার করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, কারণ সে থাকে অন্য দেশে। বাংলাদেশে তাদের অফিস বসানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার পরেও কেন অফিস হয়নি, এ বিষয়ে তাদের উত্তর আমাদের কাছে যথাযথ মনে হয়নি। ওরা আমাদের ঘোরাচ্ছে। দ্রুত এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চায় না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সব সময় মাথায় ছিল দেশ স্বাধীন হলেই ফেরত আসব। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এখন যে মানসিকতা, তারা থেকে যেতে চায়। তারা তো আরেক দেশের নাগরিক। তাদেরকে তাদের দেশে সসম্মানে, পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে যেন ফেরত নেয়া হয়, সে বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এখানে উচ্ছৃঙ্খলতা, মারামারি, গোলাগুলি বন্ধ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও তৎপর হবে।’