-প্রয়াত মেজর পি কে ঘোষ
মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসা প্রথম ভারতীয় কমান্ডার বিএসএফ কর্মকর্তা মেজর পরিমল কুমার ঘোষ আর নেই। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ৮৪ বছর বয়সে নয়া দিল্লিতে প্রয়াত হন। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজনসহ গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শনিবার এক বিবৃতিতে গভীর শোক জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম–মুক্তিযুদ্ধ’৭১।
পিতা পরিমল কুমার ঘোষের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে মেয়ে আগমনী ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বাবা সেনাবাহিনী, বিএসএফ এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আরঅ্যান্ডএডব্লিউ-এ তাঁর কর্মজীবন নিখুঁত পেশাদারত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।তিনি বাংলাদেশের জন্য একজন নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে লড়াই করেছিলেন।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের সময় মেজর পি কে ঘোষ ত্রিপুরার সাবরুম অঞ্চলে ৯২তম বিএসএফ ব্যাটালিয়নের এফ কোম্পানির কমান্ড করছিলেন। তখন তিনি সমরেন্দ্রগঞ্জের আমলিঘাটের চারটি সীমান্ত ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন।
‘ফার্স্ট ক্রসিং ওভার অ্যান্ড ফরমেশন অব ফার্স্ট মুক্তিবাহিনী বাই বিএসএফ’-শিরোনামের অধীনে ‘বর্ডারম্যান ২০২১’-নিবন্ধে তাঁর গল্পটি ইকোনমিক টাইমস বিশদভাবে প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, একদল বাঙালি তাঁর কাছে এসে পাকিস্তানের সেনাদের বর্বরতার কথা বর্ণনা করে সাহায্য চাইলে তিনি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের না জানিয়ে, কোর্ট মার্শালের ঝুঁকি নিয়ে সীমানা অতিক্রম করেছিলেন।
নিবন্ধে আরও তুলে ধরা হয়, বাঙালিরা তাঁর কাছে এসে বলেন যে পাকিস্তানের সেনারা গ্রামবাসীদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করছেন। বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করে নির্যাতন করা হচ্ছে। এ বর্বরতা থেকে পরিত্রাণের জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি সহানুভূতি দেখিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের এ অভিযোগ জানানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু পি কে ঘোষকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ সন্মাননা না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুণ হাবীব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে মেজর পি কে ঘোষের অনন্য অবদান রয়েছে। অথচ তিনি এখনও মুক্তিযুদ্ধ সন্মাননা পাননি। এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’