হাড় কাঁপানো শীতে চা শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের লোকেরা কাবু হয়ে পড়ছেন। গত কয়েকদিনের প্রচন্ড ঠাণ্ডা ও ঘনকুয়াশায় জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। শিশু ও বয়স্কদের অনেকেই ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন। গত তিনদিন ধরেই দিনে সূর্যের তেমন আলো দেখা যাচ্ছে না।
চা বাগান, বনাঞ্চল ও হাওর অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলায় নিম্ন আয়ের লোকদের মধ্যে গরম কাপড়ের অভাব দেখা দিয়েছে। রোববার সকাল ৯টায় জেলায় তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রকৃতির অরণ্যানি, গাছ গাছালি ও সবুজে ঘেরা থাকায় চা বাগান সমুহে সাধারণত শীত, মৃদু বাতাস ও ঘনকূয়াশাও তুলনামূলক বেশি। ফলে শীতের প্রচ-তায় ঠা-ায় কাবু হয়ে পড়েন বস্তির নিম্ন আয় ও চা শ্রমিকদের বড় একটি অংশ। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে হাড় কাঁপানো শীতে তারা খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন। কনকনে শীতের কারণে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগও বাড়তে শুরু করেছে।
চা শ্রমিকরা জানান, স্বল্প আয় থাকায় গরম কাপড় কেনা তাদের অধিকাংশেরই সামর্থ্যের বাইরে। শীত নিবারনে এসব পরিবার সদস্যরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়খুঁটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে সময় কাটান। চা বাগান কর্তৃপক্ষ, সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগেও এবছর কোন শীতবস্ত্র বিতরণ হচ্ছে না। চা বাগানের প্রায় ৮৫ শতাংশেরই খুবই দু:খ-কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন।
শমশেরনগর দেওছড়া চা বাগানের শ্রমিক সন্তান রাজু রবিদাস বলেন, এখন আর নির্বাচন নয়। তাই শীতবস্ত্র বিতরণে কেউ আসছেন না। দরিদ্র চা শ্রমিক পরিবার সদস্যরা প্রচ- শীতে খুবই কষ্ট ভোগ করছেন।
শমশেরনগর চা বাগানের ফাঁড়ি দেওছড়া চা বাগান শ্রমিক মায়া রবিদাস, লক্ষ্মীমনি সিং, শমশেরনগরের আদরমনি মৃধা বলেন, দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে পাঁচ, সাত সদস্যের পরিবারের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আমরা চা শ্রমিকরা খাইবো কি আর কাপড় চোপড় কিনবোই বা কি? কৃষি শ্রমিক সুরমান আলী ও জামান মিয়া বলেন, এই ঠান্ডায় প্রচ- কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। আমাদের আয় রোজগার নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় সংসারের খরচ যোগাবো না গরম কাপড় কিনবো?
শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন, দেওছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি শংকর রবিদাস ও চা শ্রমিক সংঘের নেতা রাজদেও কৈরী বলেন, শীতের সময়ে চা শ্রমিকদের মধ্যে বাগান কর্তৃপক্ষ কোন শীতবস্ত্র বিতরণ করেন না। কয়েক বছর আগে বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে চটের বস্তা বিতরণ করতো। এখন আর কিছুই দেয়া হয় না। অধিকাংশ শ্রমিক পরিবার সদস্যরা শীতে কষ্ট পোহাচ্ছেন। তাছাড়া চা বাগানগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাও নাজুক। ডিসপেনসারীগুলোতে ভালো চিকিৎসা সুবিধাও নেই। সবমিলিয়ে চা শ্রমিকরা ভালো নেই।
শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান জানান, রোববার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলস্থ অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বহুমাত্রিক.কম