ছবি- সংগৃহীত
অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেছেন, রবীন্দ্র পাঠ ও চর্চা একসঙ্গে চালাতে হবে। তার সৃষ্টি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তার মতো আর্ত মানবতায় নিজেদের বিলিয়ে দেয়ার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘আকাশে দুই হাতে প্রেম বিলায়’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এ কথা বলেন তিনি। ‘প্রান্তজনের প্রতি রবীন্দ্রনাথের দায় এবং পতিসর’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি আতিউর রহমান।
আতিউর রহমান বলেন, এই রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ হতেন না যদি পূর্ববঙ্গে না আসতেন। প্রজাদের অভাব ও দুঃখ দূর করবার জন্য অনেক উদ্যোগ নেন তিনি। কৃষি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আরও বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে মানুষ অপর মানুষকে সম্মান করতে পারে না, সে মানুষ কারও উপকার করতে পারে না। দুই বিঘা কবিতায় যিনি উপেনের কষ্ট তুলে ধরেছেন প্রান্তজনের প্রতি সবসময় ছিল অগাধ ভালোবাসা। পতিসরে তিনি নানা উদ্যােগ নেন কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে। এখনও পতিসর তার স্মৃতি বহন করে চলেছে। দারিদ্র্যপীড়িত মানুষকে কবি ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। তাই নিজে জমিদার হয়েও প্রজাদের ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে কাজ করেন কবি।’
তিনি বলেন, ‘১৮৯১ সালের ১৩ জানুয়ারি পতিসরে আসেন কবি। রবীন্দ্রনাথ এই অঞ্চলের কৃষি ও শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য স্কুল এবং ব্যাংক গড়ে তোলেন। আমাদের রবীন্দ্র সংগীত ও রবীন্দ্র পাঠ চর্চা একসঙ্গে চালাতে হবে। তার সৃষ্টি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।’
সম্মিলন পরিষদের চট্টগ্রামের সভাপতি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুপম সেন বলেন, রবীন্দ্রনাথ তার ছেলে ও জামাতাকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন কৃষি শিক্ষা গ্রহণ করতে। তাদের বলেছিলেন ফিরে এসে প্রজাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। তার ছেলে ফিরে এসে সেই কাজে লেগেছিলেন।
তিনি বলেন, বাঙালির যাপিত জীবনে রবীন্দ্রনাথ এক অনিবার্য সত্তা। বাঙালির প্রেম বিরহ বেদনাকে একীভূত করেছেন তার সৃষ্টিতে। তার মধ্যে বাঙালি বেঁচে থাকার প্রেরণা খুঁজে বেড়ায়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শ্রেয়সী রায়। শ্রেয়সী রায় বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে জানা আমার ফুরাবে না। বাঙালির প্রেম বিরহের কবি রবীন্দ্রনাথ।’
নাট্যজন অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন পরিষদের সহসভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম ও অনুবাদক আলম খোরশেদ। এর আগে গানের সুরে সুরে প্রদীপ প্রজ্বালন করেন অতিথিরা।পরে পরিষদের চট্টগ্রামের সদস্যদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় গীতি আলেখ্য 'হে বন্ধু, হে প্রিয়'। পরিচালনায় ছিলেন শিল্পী শ্রেয়সী রায়। নৃত্য পরিচালনা করেন প্রমা অবন্তী। কখনো সমবেত কখনওবা একক কণ্ঠে ভেসে আসে ‘দুই হাতে প্রেম বিলায়, চির বন্ধু চির নির্ভর, আমি বহু বাসনায়’ ইত্যাদি গান।
শেষে সংগীত পরিবেশন করেন অতিথি শিল্পী বুলবুল ইসলাম, লাইসা আহমেদ লিসা ও সুকান্ত চক্রবর্তী।