Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আশ্বিন ৭ ১৪৩১, সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিপ্রতীপ

অঞ্জনা দত্ত 

প্রকাশিত: ০০:৪১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রিন্ট:

বিপ্রতীপ

ছবি- সংগৃহীত

পর্ব – ৩ 

শ্বশুর না থাকলেও বাড়ি ভর্তি লোক ছিল। বিধবা পিসশাশুড়ি,নিজের শাশুড়ি, স্বামী এবং সন্তানদের খাইয়ে দাইয়ে বিছানায় যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যেত। একজন তখন ঘুমে কাদা হয়ে যেত। স্বর্ণলতা প্রথম প্রথম মন খারাপ করতেন। বালাপোশটা টেনে নিয়ে যেই না পাশ ফিরে শুতে যেতেন অমনি দুটো সবলবাহু তাঁকে নিজের দিকে পাশ ফিরিয়ে নিয়ে প্রথমে সকালে কোর্টে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ অদর্শনের বদলা নিতে নিজের পুরুষ্ট দুটো ঠোঁট দিয়ে গোলাপের পাপড়ির মতো পাতলা দুখানি ঠোঁট দখলে রাখত পিপাসা না মেটানো পর্যন্ত। আবেগে স্বর্ণলতা দেবীর দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ত। প্রথম দিকে স্ত্রীর চোখে জল দেখে সূর্যশেখর অস্থির হয়ে পড়তেন। পরে যখন বুঝতে পেরেছিলেন এটি ছিল সুখের কান্না,তখন তাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতেন। এরপর শুরু হতো অভিযোগের পালা।

“এতক্ষণে সময় হলো দেবীর”?

“মায়ের তো কাজ শেষ হয় না। উনি শুতে না গেলে আমি কী করে আসি”? 

“আমি বুঝি না মায়ের নিজের বিয়ের পরের কথা মনে পড়ে না”? 

স্বর্ণলতা স্বামীর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলতেন 
 
“মা বাবাকে নিয়ে এইসব কথা বলতে নেই”।

“বলার কী দরকার ? বুঝে নিতে হয় না”? 

স্বর্ণলতা নীরবে দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখতেন। তাঁর এতদিনে জানা হয়ে গেছে শাশুড়ি মধুর জীবন কাটাননি বিয়ের পরে।যে কতদিন পেয়েছিলেন স্বামীকে ভালোবাসা, মায়া মমতা কিছুই পাননি না স্বামীর থেকে,না তাঁর শাশুড়ির থেকে। তবে নিজের স্বামীর সাথে স্বর্ণলতা দেবী তাঁর হৃদ্যতার কথা বাইরে প্রকাশ করতেন না। ঐ সুখটুকুর ভাগ তিনি কাউকে দিতে চাইতেন না। বাড়িতে অন্য বৌরাও ছিল। অবলীলায় ওরা স্বামীর সাথে সম্পর্কের কথা বলত। নিজেরা যখন দুপুরবেলায় সব কাজ শেষে এক জায়গায় বসে নিজ নিজ শাশুড়িদের বদনাম করতেন,  তখনো স্বর্ণলতা নীরব শ্রোতা হয়ে থাকত। ওর মুখ থেকে ওরা কোনোদিন কোনো কথা বের করতে পারেননি। এমনকী শাশুড়ির সম্পর্কেও না। বৌরা টিপ্পনি কেটে বলতেন  

“তুই কী ভাবিস আমরা কালা ? কানে শুনি না ? জ্যাঠাইমা তোকে কত ভালোবাসে সেতো আমরা নিজেদের চোখে দেখতে পাই। শাশুড়িরা কখনো আপন হয় নালো। ওলো এত দেমাগ ভালো নয়। আমরাও বানের জলে ভেসে আসিনি এই বাড়িতে”। 

ছোটো জা বেশি মুখরা ছিল। এত কথায়ও স্বর্ণ চুপ করে থাকতো। একসময় জায়েরা হাল ছেড়ে দিত। স্বর্ণ হাঁফ ছেড়ে বাঁচতো। ও যে রাত্রির আশায় সময় গুনতো। ওটা তাঁর নিজস্ব পৃথিবী। সূর্যশেখর আর স্বর্ণলতার তৈরি এক টুকরো স্বর্গ! 

তবে হেমাঙ্গিনী ঠিকই বুঝতে পারতেন। স্বর্ণের স্বামী সোহাগী চেহারা তাঁর বুকে আগুন ধরিয়ে দিত। তখন নিজের সেই সময়কার অঙ্গার হয়ে যাওয়া জীবনের কথা মনে পড়ে যেত। এতবড়ো বাড়ি থেকে এসেও তিনি শাশুড়ি নিস্তারিণী দেবীর অত্যাচার থেকে নিস্তার পাননি। সাথে ছিল বিধবা পিসশাশুড়িদের ও  কাকিশাশুড়িদের আগুনে ঘি ঢালার ভূমিকা। বাপের বাড়িতে তিনি খুব আদরে বড়ো হয়েছিলেন। একমাত্র কন্যা যশোর জেলার প্রতাপশালী জমিদার দুর্গাচরণ রায়চৌধুরীর। আদরের কন্যার বিয়ে ধুমধাম করে দিয়েছিলেন তিনি। পাত্রপক্ষের মর্যাদা রক্ষা করেই।সাত গাঁয়ের লোক খাইয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ে কেমন আছে শ্বশুরবাড়িতে সেই খবর রাখেননি বাবা। সেই সময়ে এর প্রচলনও ছিল না। তাই নিজের না পাওয়া যন্ত্রণা ঝাড়তেন নীরিহ পুত্রবধূর ওপর। 

তবে বৌটি বড়ো লক্ষ্মীমন্ত। এই বাড়িতে আসার পর তাঁদের জমিদারির আয় যেমন বেড়েছিল, তেমনি খোকার উকিল হিসাবে কোর্টে নামও ছড়িয়ে পড়েছিল। তবু হেমাঙ্গিনী কেন জানি না স্বর্ণলতাকে সহ্য করতে পারতেন না। এটিই তখনকার দিনে হয়ে থাকতো প্রতি ঘরে ঘরে। তবে স্বর্ণকে তাঁর স্বামী চক্ষে হারালেও তিনি কখনো শাশুড়িকে অশ্রদ্ধা করেননি। রাগে দুঃখে অনেকসময় শাশুড়ির মুখে চলে আসত তাঁর বিয়ের পরের জীবনের কথা। শ্বশুরমশাই এর অন্য সমস্যার কথাও চলে আসতো। স্বর্ণলতার কষ্ট হতো শাশুড়ির জন্য। কিন্তু মুখে প্রকাশ করার সাহস ছিল না। তাই চুপচাপ শুনে যেত। বৌ এর এই স্বভাবটি হেমাঙ্গিনীকে আরও ক্ষেপিয়ে দিত। তিনি ভাবতেন স্বর্ণলতা অহংকারে তাঁকে অবহেলা করছে। বৌটি কিছু বললে হয়তো বা তাকে আপন ভাবতে পারতেন। তবে তাঁকে বুঝতে চাওয়ার সম্পর্ক তো তিনিই রাখেননি।

একদিন হিমাদ্রি অফিস থেকে ফিরে লজ্জার মাথা খেয়ে নিজে গেল মায়ের ঘরে। ছেলেকে দেখে মা হাসলেন। হিমাদ্রি লজ্জা পেল। মা নিজে থেকেই বললেন ওর বাবা ঠাকুরমার সাথে কথা বলবেন। আগেও একদিন আভাস দিয়ে রেখেছিলেন। 

“ঠাকুরমার সাথে ? বুড়ি তো রাজি হবে না”।

“ছিঃ বাবা এভাবে বলতে নেই। তোমার ঠাকুরমা নন”? 

“কিন্তু উনি তো ওনার নিজের প্রতিনিধি ঠিক করে রেখেছেন। আমি কিন্তু ঐ মেয়েকে বিয়ে করব না বলে রাখলাম”। 
 
“কে কাকে বিয়ে করবে না ? হিমুর এমন যুদ্ধং দেহিং ভাব কেন”? সূর্যশেখর হালকা চালে জানতে চাইলেন ছেলের কাছে ? 

হিমাদ্রি মাথা নিচু করে রইল।  

“তুমি এই সময়ে ঘরে এলে ? চেম্বার আজ তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিলে”? স্বর্ণলতা মনে মনে প্রমাদ গুণলেন। শাশুড়ি যদি দেখে ফেলে এর দায় ওকে সামলাতে হবে। সামনে না থাকলেও সেদিন বড়োখোকার বিয়ে নিয়ে মা ছেলের কথা যে মধুরভাবে শেষ হয়নি সেটি স্বর্ণ বুঝেছে। আর এখন চেম্বার ছেড়ে মাঝপথে উঠে এসেছে দেখলে কী যে অনর্থ করবে কে জানে ? 

“মেজখোকা সামলাচ্ছে। ওকে স্বাবলম্বী হতে দিচ্ছি। আমি তো চিরটাকাল থাকব না। মাথাও ধরে আছে। ভাবছি চা খাবো। ও হ্যাঁ মাকে বলেছি জয়শ্রীর মাকে কিছু বলার দরকার নেই”। 
  
“এ কেমন অলক্ষুণে কথা” বলে স্বর্ণ উঠতে গেল চা বানাতে।

“তোমার যেতে হবে না। বুচির মাকে বলে এসেছি। খোকা তুই খাবি”? 

খোকার চায়ের ব্যাপারে কোনো উৎসাহ নেই। জানতে চাইল 

“ঠাকুরমা রাজি হয়েছেন”? 

“রাজি কী আর সহজে হয় ? যাই হোক,তোর এই নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। আমরা আছি না”? 

এবারে বুঝল হিমাদ্রি মা কীভাবে ওদের আবদার পূরণ করেন। ওর চোখের সামনে থেকে ধুসর পর্দাটা চলে গেল। ঠাকুরমার এত গালমন্দ খেয়েও মা কীভাবে সংসারের সবকাজ ঠিকভাবে ম্যানেজ করে নেন। বাবার প্রতি ওর ভালোবাসা আরও বেড়ে গেল।
 
“আমার ছেলের পছন্দ ফেলে দেবার মতো হবে না বলেই আমার বিশ্বাস”। সূর্যশেখর নিজে থেকেই বললেন।  

“মেয়েদের খবর দিতে হবে তো ? বাড়ির প্রথম বৌ। ওদেরও মতামত থাকতে পারে”। স্বর্ণ বলল।

“এটা কি বলির পাঁঠা কিনতে যাচ্ছ নাকি ? ওরা আশীর্বাদের সময়ে আসবে।  এখন একদিন তুমি গিয়ে দেখে আসবে”।

“বারে আমি একা যাবো নাকি ? তোমাকেও যেতে হবে আমার সাথে”।

“আচ্ছা সে দেখা যাবে’খন”।

বুচির মা চা বানিয়ে আনল। হিমাদ্রির জন্যও।  

“আমি তো চায়ের কথা বলিনি”?   
 
“আমি দেকেছি তো কাকাবাবু তোমাকে এই ঘরে আসতে। দাদাবাবু আর বৌদিদিমনির জন্য যখন বানালাম তখন তুমি বাদ যাবে কেন? সাথে হিং এর কচুড়ি”।

হিং এর কচুড়ি স্বর্ণের প্রিয়। স্বর্ণ বুঝল এটা কার কাজ ? দুজনে দুজনার দিকে  তাকালেন আবেগভরা দৃষ্টিতে। ছেলে আর একবার চমৎকৃত হলো। আচ্ছা ও কী শুচিকে এইভাবে ভালোবাসতে পারবে না ?  
 
“মা জানেন শুচিস্মিতা দেখতে যেমন সুন্দর,গানও গায় চমৎকার। আপনাদের পছন্দ না হয়েই যায় না!”বলেই মাকে জড়িয়ে ধরল। মা একটু হাসলেন। ছেলের এই স্পর্শটুকুর জন্য আজ কত বৎসর অপেক্ষা করেছিলেন! বাবা চা শেষ করে চলে যাওয়ার পর হিমাদ্রি খুশির চোটে বলে ফেললো! 

“হ্যাঁরে বৌটা তোদের মত আমার থেকে দূরে দূরে থাকবে নাতো”? 

লজ্জায় হিমাদ্রির মাথা হেঁট হয়ে এল।

“মা আমি ওকে সব বলে রাখব। আর তাছাড়া আমার মনে হয়েছে ও খুব বুদ্ধিমতী। নিজেই বুঝতে পারবে”।

“খোকা আমি চাই না তুমি শুচিস্মিতাকে কিছু বলো। বোঝার হলে ও নিজেই বুঝতে পারবে। ও তো ভালো পরিবারের মেয়ে। নিজেই জানবে বড়োদের কীভাবে সম্মান করতে হয়। ওখানে আমাদের বাড়ির সাথে না মিললে তখন শুধরে দেবে। নতুন মানুষ এসেই কথা শুনুক আমাদের বাড়ির জন্য এটা ভালো দেখাবে না”।

হিমাদ্রি মাথা নাড়ল। এ যেন অন্য এক মাকে দেখল হিমাদ্রি। অবাক হলো। এই নরম মানুষটার মধ্যেও একটা ব্যক্তিত্ব লুকিয়ে আছে ! ওরা কোনোদিন ভাবলই না মায়ের কথা সেভাবে? জানত শুধু মা হলেন তেজস্বী ঠাকুরমার হুকুম তামিল করা ,রাশভারি ( দেখে মনে হতো ) বাবার যাবতীয় প্রয়োজনের দিকে তীক্ষ্ণ  নজর রাখা আর ওদের খাবার দাবার জুগিয়ে যাওয়া ,বাড়িতে বেড়াতে আসা আত্মীয়স্বজনের মন জুগিয়ে চলা … সংসারে কার কী কী লাগবে তার ফিরিস্তি ঠাকুরমাকে জানানো। তাঁর অনুমতি মিললেই তবে সেগুলো বাবা কেনার ব্যবস্থা করতেন। তবে যে জিনিসটি ওরা জানত না তা হলো ওদের বাবার দুর্বল জায়গা ছিল মা। মা কোনোদিন সেটি প্রকাশ করেননি। সেই জোর খাটিয়ে শাশুড়িকে অশ্রদ্ধা করেননি। সেইজন্য সূর্যশেখর রায়চৌধুরীর কাছে তাঁর স্ত্রী কাঞ্চনের মতোই দামি হয়ে উঠেছিলেন। বাইরে তাঁকে যতটা কঠিন মনে হতো ,ভিতরে বয়ে যেত স্নেহের প্রস্রবণ! আর সেটি সম্ভব হয়েছিল মায়ের কল্যাণে।  

‘তোমার অপমান হয় মতো আমি ওকে কিছু বলবো না মা। তবে আমার মনে হয় ও নিজেই বুঝতে পারবে ঠাকুরমার ব্যাপারটা। ভালোবাসা একতরফা হয় না মা’।

‘সবসময় এটি ঠিক হয় না খোকা। তবে স্ত্রীকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটা দিস। মানুষ  হিসাবে,তোর জীবনসঙ্গী হিসাবে … জীবনের যে কোনো সিদ্ধান্ত তাকে না জানিয়ে নিস না। এটা মনে রাখিস বাবা’। 

‘মা আপনি কোনোদিন এভাবে কথা বলেননি কেন ? আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিননি কেন? প্রয়োজনের কথাগুলো বাবাকে বলতাম। বাবাও কখনো বলেননি মাকে গিয়ে বলো। আমরা সবাই যেন আলাদা একটা দ্বীপে বাস করতাম। ঠাকুরমা আপনাকে এমন …’ 

‘বড়োদের সম্পর্কে এভাবে বলতে হয় না বাবা। ঠাকুরমা আমার থেকে অনেকবেশি যন্ত্রণা সয়েছেন। সেই তুলনায় আমি স্বর্গে আছি। শুধু তোমাদের বেশিদিন কাছে পাইনি’।  

‘স্যরি মা। এমন ভুল আর হবে না। আমি ভাইদের বলবো’।

‘কাউকে কিছু বলতে হবে না। এগুলো বলে শেখানো যায় না। আমারই হয়তো কোনো খামতি ছিল। আমিই পারিনি তোদের ঠিকমতো শিক্ষা দিতে’। 

সেদিন রাতে হিমাদ্রির সাথে কথা বলে রাতের প্রিয় আশ্রয়ে গিয়ে স্বামীর গলা  জড়িয়ে শুয়ে পড়লেন স্বর্ণলতা। সূর্যশেখর বুঝলেন আজ মহারানির বিশেষ  কোনো আবদার আছে। তা নাহলে মেঘ না চাইতে জল পেতেন না। অনেক সময় তো রীতিমত কাঠখড় পুড়িয়েও মনের নাগাল পেতে গলদঘর্ম হতে হয়। স্বামী প্রবর সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগাতে দেরি করলেন না। প্রতিদানও পেলেন। কিন্তু এরপরেই কিছুটা গম্ভীর স্বরে বোমা ফাটালেন স্বর্ণলতা দেবী   

‘আমি কিন্তু তোমার সাথে আর বেশিদিন ঘুমাতে পারব না’।
 
‘কেন’? 

‘বারে! বড়োখোকার বৌ আসবে না’? 

‘আসবে। এর সাথে আমাদের একসাথে ঘুমুতে না পারার কী সম্পর্ক রয়েছে’? সূর্যশেখরের দুহাত তখনো স্বর্নলতার মেদহীন শরীর জড়িয় রয়েছে। এতগুলো সন্তানের মা হয়েছে তাঁর স্বর্ণময়ী ,অথচ শরীরে এখনো কোনো ভাঙন ধরেনি। কত অত্যাচার সইতে হয় সারাদিন। অথচ মুখ ফুটে কখনো কিছু বলে না। বরং সবাইকে কী করে ভালো রাখবে তার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যায়। নিজের মায়ের জীবনের কথা তিনি জানতেন।তাই মাকে কিছু বলতে পারতেন না। সেই সময়ে মায়ের কাছে বৌ এর হয়ে সওয়াল করার কথা ভাবাই যেত না। তাই এক রাতে স্বর্ণের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।স্বর্ণ মুখ চেপে ধরেছিল।সেইরাতেই স্ত্রীকে আবেগে আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে বলেছিলেন ‘রাতটুকু আমাদের দুজনের। এর ব্যত্যয় ঘটেনি আজ পর্যন্ত।

‘কী যে বলো না ? বৌ আসবে। এখন ওদের সময়। আমাদের বাড়িতে তো তাই দেখতাম’। 

‘তোমাদের বাড়ির কথা বলতে পারব না। আমি যতদিন বেঁচে আছি এই নিয়ে যেন আর দ্বিতীয়বার কথা না শুনি’। রায় দিয়ে দিলেন জজসাহেবের মতো। 

‘আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু ছেলেকে তো বিয়ে করাতে হবে। মায়ের শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না’। 

‘বিয়ে করাতে হবে,করাও না। বারণ করিনি তো ? আচ্ছা বলতো তোমার মাথায় এই কথা আসলো কেন’? 

‘কোন কথা’? 

‘দেখো তুমি ঠিকই বুঝেছ আমি কী জানতে চাইছি? মা কিছু বলেছেন’? 

‘না,না। স্বর্ণ অনেকটা আর্তভাবে বলে উঠল। আমি নিজেই ভাবছিলাম। লজ্জা করে না বুঝি’?  

‘আমাকে ছেড়ে একা ঘুমুতে পারবে’? 

‘মেয়েদের অনেককিছু পারতে হয়’।

‘তা ঠিক। একসময় মা অনর্থক তোমাকে বকতেন। কোনদিন প্রতিবাদ করতে পারিনি। ঠাকুরমার হাতে মায়ের লাঞ্চনার কথা ভেবে বড়ো কষ্ট পেতাম। তুমি নিজে নিজে সামলে নিতে … বড়ো গর্ব হতো তোমায় নিয়ে। তাই রাতটা হয়ে উঠত খুব আনন্দের। এমন না যে শুধু শারীরিক প্রয়োজনে তোমাকে চাইতাম। কী যেন পেতাম তোমার মাঝে … এখনো পাই … আর তুমি বলছ’

‘ওহোঃ! ওটা তো ডিসমিস হয়ে গেছে। ওই ডেড ইস্যু কেন টানছ’? 

‘ওরে বাবা ! তুমি দেখছি পুরোপুরি ওকালতি ভাষায় কথা বলছ’? 

‘এত বছর ঘর করছি দুঁদে উকিলের সাথে।একটু আধটু তো শেখা হয়েই যায় , তাই না’?  

‘হুম তোমার মতো বুদ্ধিমতীকে পড়ানো যেত। সময় থাকতে মাথায় আসেনি’।

‘এইসব কথা রাখো না’? 
 
‘আজকাল খুব মনে হয় তোমার ওপর অবিচার করা হয়েছে’।

‘আমি শ্বেতার ঘরে চলে যাবো কিন্তু’।  

‘আমার ঐ দুর্বলতার সুযোগটাই তো নিতে চাও সবসময়। আচ্ছা বলো খোকার জন্য মেয়ে দেখেছ’? 

‘আমাকে দেখতে হয়নি। খোকাই দেখেছে’! 
 
‘আমার মুখচোরা ছেলেটা নিজের জন্য বৌ ঠিক করে নিয়েছে ? ছেলেটা আমার মতো হবে। বৌকে খুব ভালোবাসবে’। 

‘আমাকে কী তুমি নিজে পছন্দ করেছিলে’? 
 
‘তা করিনি। তবে ভালো তো বেসেছি। ওখানে কোনো খাদ ছিল না স্বর্ণময়ী’  বলেই দেরি না করে স্বর্ণকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। 

( চলবে... )

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer