ফাইল ছবি
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজেস (বিআইএল) এর আয়োজনে “ভাষার রূপান্তর: ডিকলোনিয়াল প্রেক্ষাপটে ভাষা শিক্ষার প্রভাব” শীর্ষক তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সম্প্রতি শেষ হয়েছে।
এই কনফারেন্সে ভাষা শিক্ষায় উপনিবেশিক ধাঁচের প্রভাব এবং তা থেকে উত্তরণের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও রূপান্তরমুখী পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩০০ জনেরও বেশি শিক্ষক-গবেষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন। তিনদিনব্যাপী এই কনফারেন্সে ছিল ছয়টি মূল প্রবন্ধ, দুইটি প্লেনারি সেশন, একটি কলোকুইয়াম এবং ১৫১টি প্রেজেন্টেশন। ভাষাগত বৈচিত্র্য, বহুভাষিক শিক্ষা, ডিকলোনিয়াল পাঠ্যক্রমের উন্নয়ন, ভাষা নীতি, ভাষাগত বর্ণবাদ, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য উদ্ভাবনী কৌশলসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে এই কনফারেন্সে আলোচনা করা হয়।
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলেনে উল্লেখযোগ্য বিশেষজ্ঞ আলোচকদের মধ্যে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সুরেশ কানাগারাজা, নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটির অফ অকল্যান্ডের প্রফেসর স্টিফেন মে, অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো প্রফেসর সেন্ডার ডোভচিন, ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ইউভাসকুলার প্রফেসর ইমেরিটাস সিপরা লিপানেন, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ইমেরিটাস রবার্ট ফিলিপসন এবং অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনির প্রফেসর ইমেরিটাস অ্যালিস্টার পেনিকুক।
আমন্ত্রিত বক্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন এডুকেশন ইউনিভার্সিটি অব হংকং এর ড. প্রমোদ কে সাহ ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড এর ড. ওবায়েদ হামিদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর অধ্যাপক এ এম এম হামিদুর রহমান এবং ইউনিভার্সিটি সাইনস মালয়েশিয়া এর ড. মঞ্জিত কৌর মেহার সিং।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে ট্রান্সলিঙ্গুয়ালিজম কীভাবে অর্থ গঠনে ভূমিকা রাখে, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেই সাথে শিক্ষা এবং মূল্যায়নে ভাষার সামাজিক দিকগুলোর গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। এছাড়াও তারা গ্লোবাল সাউথে ভাষানীতির নিয়ে কথা বলেন, যেখানে বিশেষভাবে স্থানীয় বা আদিবাসী ভাষাগুলোর ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে আলোচকরা বহুভাষিক পরিচয়ের মিশ্র স্বভাব কীভাবে গঠিত হয়, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন।
৩০ নভেম্বর ২০২৪ এ শেষ হওয়া তিনদিনব্যাপী এই কনফারেন্সে ভাষাগত সাম্রাজ্যবাদ, ডিজিটাল যোগাযোগে বহুভাষিকতা, ভাষাগত বর্ণবাদের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, এবং সমাজ পরিবর্তনে ভাষার ভূমিকা আলোচনা করা হয়। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আসিফা সুলতানা এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের ড. রফি সালেহ ডিকলোনিয়াল ভাষা শিক্ষা এবং ভাষা, পরিচিতি ও সামাজিক পরিবর্তনের সংযোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের সমাপনী অনুষ্ঠানে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজেস-এর উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা লেডি সৈয়দা সারওয়াত আবেদ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্য্য্যাতাভিত্তিক পথিবী গড়ে তুলতে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই সম্মেলন ভাষা শিক্ষায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইএলটিএ) এর উপদেষ্টা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট এর সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. আরিফা রহমান এই কনফারেন্স আয়োজন করায় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এমন ভাষায় শিক্ষা প্রদান করা উচিত যা শিশুরা বুঝতে পারে। তিনি বলেন, "বিশ্বে এখনো ৪০% মানুষ এখনো বোধগম্য ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে না। "
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজুল আজিজ বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাথে শিক্ষা কারিকুলাম এবং ইতিহাসে পরিবর্তন আনা হয়। এটা বন্ধ করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শুধু ভাষা শেখার চেয়ে সেটিকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করার সক্ষমতা অর্জন করাও সমানভাবে জরুরি।’
সমাপনী বক্তব্যে ভাষা শিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজসের ডিরেক্টর এবং কনফারেন্সের আহ্বায়ক প্রফেসর শায়লা সুলতানা। সেই সাথে অনুষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন এবং তিনি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও উপস্থাপন করেন। এছাড়া, তিনি এই সম্মেলন সফল করতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক ডিপ্লোমেসি সেকশনের পাবলিক এনগেজমেন্ট এর ডিরেক্টর স্কট ই হার্টম্যান। তিনদিনের এই কনফারেন্সে শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরিবেশনা ছাড়াও জনপ্রিয় ব্যান্ড দল জলের গান সঙ্গীত পরিবেশনা করে।