ফাইল ছবি
দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ এর পূর্বঘোষিত তালিকা স্থগিত করা হয়েছে।শনিবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সই করা এক নোটিশে তালিকা স্থগিতের তথ্য জানানো হয়
এতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি ২০২৪' এর এক সভা শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪' এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়। উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এতে আরও বলা হয়, এই অবস্থায় ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ এর পূর্বঘোষিত তালিকা স্থগিত করা হলো। অনধিক তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকাটি পুনঃপ্রকাশ করা হবে।
এছাড়া সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানান।
পোস্টে তিনি লেখেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলা প্রয়োজন, যে আজব নীতিমালা এ ধরনের উদ্ভট এবং কোটারি পুরস্কারের সুযোগ করে দেয় সেগুলা দ্রুত রিভিউ করা আমাদের প্রথম কাজ। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন সব নীতিতে চলবে- এসবব কিছুই দেখতে হবে। একাডেমির আমূল সংস্কারের দিকে আমরা যাবো এখন। দেশের সংস্কার হবে, বাংলা একাডেমি সংস্কার কেন নয়?
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪' এর জন্য ১০ ক্যাটাগরিতে ১০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়।
তারা হলেন—কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ বা গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান ও ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।
বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করবেন বলে ওইদিন জানানো হয়।
তবে ঘোষিত তালিকায় কোনো নারী লেখক না থাকা নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ফরিদা আক্তার নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, হায়রে বাংলাদেশ, হায়রে বাংলা একাডেমি। পুরস্কারের জন্য কোনো নারীকে কোনো ক্যাটেগরিতে পাওয়া গেল না!! আফসোস।
আরও অনেকেই এ বিষয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানান। পরে এক পোস্টে এ বছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের পাওয়া লেখকদের তালিকায় কোনো নারী লেখক না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে এটিকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ফারুকী ফেসবুকে লেখেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কারের সাথে মন্ত্রণালয় বা আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নাই। আমাদের সরাসরি ভূমিকা আছে একুশে পদকের ক্ষেত্রে। তারপরও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমি এই পুরস্কার নিয়ে যে সমালোচনাগুলো হচ্ছে সেটা গ্রহণ করছি।
তিনি লিখেছেন, একজন নারী লেখককেও খুঁজে না পাওয়া বিস্ময়কর। কিছু ক্যাটাগরিতে যে প্রশ্ন উঠেছে সেগুলোও অযৌক্তিক না। সময় এসেছে, এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের। একই সাথে একাডেমিকে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর মিলনমেলা না বানিয়ে কি করে ইনক্লুসিভ করা যায়, কি করে তরুণ মেধাকে এর চালিকাশক্তির অংশ করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।