ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা: উপমহাদেশের প্রখ্যাত লোকবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ড. আশরাফ সিদ্দিকী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৮ মার্চ দিবাগত রাত তিনটায় অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।
প্রতিথযশা এই সাহিত্যিক ও গবেষকের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দীর্ঘ এক মাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। প্রয়াতের প্রতি অনুরাগীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে (বাড়ি ৬৪, সড়ক: ৭এ, ধানমন্ডি) দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত রাখা হবে। ধানমন্ডি শাহী ইদগাহ মসজিদে বাদ যোহর প্রয়াত আশরাফ সিদ্দিকীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
বহুমূখি প্রতিভাধর ড. আশরাফ সিদ্দিকী বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি পাঁচশ`র ও অধিক কবিতা রচনা করেছেন। বাংলার লোকঐতিহ্য তাঁর গবেষণা বিস্মৃত পরিমণ্ডলে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি সমাদৃত। একাধারে প্রবন্ধকার, ছোটগল্প লেখক, ঔপন্যাসিক, লোকসাহিত্যিক, এবং শিশু সাহিত্যিক। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক-এ ভূষিত হন।
১৯৪৮ সালে দূর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে ‘তালেব মাষ্টার’ কবিতা রচনা করে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে গণ মানুষের কবি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘গলির ধারের ছেলেটি’ ছোট গল্প লেখক হিসেবে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করে। এই ছোট গল্প অবলম্বনে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘ডুমুরের ফুল’ চলচ্চিত্রটি জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
বাংলার মৌখিক লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লিপিবদ্ধ করার জন্য ড. আশরাফ সিদ্দিকী বিশেষভাবে সমাদৃত। তার লেখা বইগুলো- ‘লোকসাহিত্য’, ‘বেঙ্গলী ফোকলোর’, ‘আওয়ার ফোকলোর আওয়ার হেরিটেজ’, ‘ফোকলোরিক বাংলাদেশ’ এবং ‘কিংবদন্তীর বাংলা’ দক্ষিন এশিয়ার লোক সাহিত্যে গবেষনায় মৌলিক বই হিসেব বিবেচিত হয়। ‘ভোম্বল দাশ: দ্যা আঙ্কল অব লায়ন’ এবং ‘টুনটুনি এন্ড আদার ষ্টোরিজ’ ইত্যাদি গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলার লোকজ গল্পকে বিশ্ব সাহিত্যের ভান্ডরে পৌছে দেন। ১৯৫৮ সালে প্রখ্যাত ম্যাকমিলান পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত তার ‘ভোম্বল দাশ’ বইটি ছিল সে বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রিত শিশুদের বইয়ের তালিকায়। পরবর্তীতে এ বইটি ১১টি ভাষায় অনুবাদিত হয়। তার ৭০দশকে লেখা ‘রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন’ ও ‘প্যারিস সুন্দরী’ আজও তরুন পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়।
১৯২৭ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলে জন্ম নেওয়া ড. আশরাফ সিদ্দিকী ১৯৭৬ থেকে ছয় বছর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৩ সালে জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান। তিনি রাজশাহী কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, ময়মনসিংহের এএম কলেজ, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক, ডিস্ট্রিকট গ্যাজেটিয়ারের প্রধান সম্পাদক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
ড. সিদ্দিকী বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট, নজরুল একাডেমির আজীবন সভাপতি এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে মুখ্য ভূমিকা রাখেন তিনি।