ফাইল ছবি
তবলার অতুলনীয় শিল্পী এবং একাধিক গ্র্যামি পুরস্কারজয়ী জাকির হোসেন গুরুতর অসুস্থ এবং হৃদরোগজনিত জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে রোববার দিনগত মধ্যরাতে তার পরিবার জানিয়েছে।
তার ম্যানেজার নির্মলা বাচানি জানিয়েছেন, জাকির হোসেন গত দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
‘আমার ভাই বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। আমরা ভারতের এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ভক্তদের কাছে তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করার আবেদন জানাচ্ছি। কিন্তু ভারতের সেরা সাংস্কৃতিক বৈশ্বিক ব্যক্তিদের একজন হিসেবে, তাকে এত তাড়াতাড়ি বিদায় দেবেন না।’ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন জাকির হোসেনের বোন খুরশিদ আউলিয়া।
‘আমি শুধু গণমাধ্যমকে অনুরোধ করবো, জাকিরের মৃত্যুর বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করবেন না। তিনি এখনও বেঁচে আছেন। তিনি অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন, কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছেন। আমি অনুরোধ করবো (গণমাধ্যমকে) এই গুজব ছড়াবেন না যে তিনি মারা গেছেন। ফেসবুকে এ ধরনের ভুল তথ্য দেখে খুবই খারাপ লাগছে।’ যোগ করেন শিল্পীর বোন।
জাকির হোসেনের বন্ধু এবং বাঁশিবাদক রাকেশ চৌরাসিয়া পিটিআইকে জানিয়েছেন, ‘তিনি অসুস্থ এবং বর্তমানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। আমরা সবাই পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
রবিবার দিনগত সন্ধ্যার পর জাকির হোসেনের মৃত্যু নিয়ে ছড়িয়ে পড়া খবরে ভারতের অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এক্স-এ (পূর্বের টুইটার) শোক প্রকাশ করেন, যদিও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি ভারতের সকল গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ মাধ্যম মৃত্যুর খবরটি প্রকাশ করেছে।
ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, যারা জাকির হোসেনের মৃত্যুর খবর সম্পর্কে একটি পোস্টও করেছিল, পরে তা এক্স হ্যান্ডেল থেকে মুছে ফেলে।
‘আমি জাকির হোসেনের ভাতিজা বলছি, তিনি মারা যাননি। আমরা আমার চাচার সুস্থতার জন্য প্রার্থনার অনুরোধ করছি। দয়া করে এই ভুল তথ্য মুছে ফেলুন। তিনি গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন এবং আমরা তার সকল ভক্তের কাছে তার জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ করছি।’ এক্স-এ লিখেছেন আমির আউলিয়া।
‘আমি জাকির হোসেনের ভাতিজা বলছি, তিনি মারা যাননি’
মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া এবং কিংবদন্তি তবলা বাদক আল্লা রাখার জ্যেষ্ঠ পুত্র জাকির হোসেন তার বাবার পথ অনুসরণ করে নিজেও ভারতের এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক আইকন হয়ে ওঠেন।
২০০৯ সালে নিউইয়র্ক টাইমস তার কার্নেগি হলের পারফরম্যান্স সম্পর্কে লিখেছিল, ‘উত্তর ভারতীয় তবলার অতুলনীয় শিল্পী জাকির হোসেন তার নিপুণ কৌশল ও সৃজনশীল উদ্ভাবনশীলতার জন্য পরিচিত। তার আঙুলের গতির ঝাপটা কখনও কখনও উড়ন্ত পাখির ডানার গতির মতোই দ্রুত, কিন্তু তার সংগীত কখনোই কঠিন মনে হয় না।’
একবার নিজের প্রথম পারফরম্যান্সের গল্প বলার সময় জাকির হোসেন বলেছিলেন, তাদের বাড়িতে তার বাবার জন্য একটি কনসার্টের প্রস্তাব নিয়ে একটি চিঠি আসে। জাকির সেই চিঠির উত্তর দিয়ে জানান যে, তার বাবা ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না, তবে তার ছেলে পারফর্ম করতে পারবে। চিঠিতে উল্লেখ করেননি যে, তখন মাত্র ১৩ বছরের শিশু তিনি। সেই সিদ্ধান্ত তার সংগীতজীবনের পথ খুলে দেয়।
তিনি বহু প্রখ্যাত ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে ১৯৭৩ সালে ইংরেজ গিটারিস্ট জন ম্যাকলফলিন, বেহালাবাদক এল শঙ্কর এবং পারকাশনিস্ট টি এইচ ‘ভিক্কু’ বিনায়াকরামের সঙ্গে তার মিউজিক্যাল প্রজেক্টটি ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত ও জ্যাজের মধ্যে এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়ে গোটা বিশ্ব সংগীতকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
ভারতের অন্যতম সেরা ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিত এই শিল্পী ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন।