ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের একদল সংঘবদ্ধ যুবক প্রতিনিয়ত ইয়াবা সেবন করেন। সকালে স্থানীয় মাদবর বাড়ীর মোড়ে চায়ের দোকানে গিয়ে রাতে ইয়াবা সেবনের পর নারী নিয়ে আনন্দ করার পরিকল্পনা করেন তারা। পরিকল্পনা মাফিক সব ঠিক চললেও বিপত্তি বাদে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী নারীর সাথে টাকার বনিবনা নিয়ে। চাহিদাকৃত টাকা না পেয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে জোড়ে চিৎকার করতে থাকেন ঐ নারী৷ অবস্থা বেগতিক দেখে নারীর গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন সংঘবদ্ধ যুবক দলের সদস্যরা। পরে লাশের শরীরে ইট বেঁধে পাশে থাকা পুকুরে ফেলে চলে যান তারা।
গত বছরের জুলাই মাসে গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন টেপিরবাড়ি এলাকার সুমনের পুকুর থেকে অজ্ঞাতনামা এক মহিলার লাশ উদ্দেশ্য করে পুলিশ। অনুমানিক ৩০ বছর বয়সী মহিলার লাশটি সম্পূর্ন পচন অবস্থায় ছিল। তবে শরীরের কোন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। লাশের পরিহিত কাপড় দ্বারা হাত—পা বাঁধা ছিল এবং লাশের কোমরের সাথে ৩ টি ইট বাধা ছিল। শ্রীপুর থানাধীন তেলিহাটি ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বারসহ স্থানীয় লোকজন ও শ্রীপুর থানায় কর্মরত নারী কং/৫২৯ সাজেদা পারভীনদের সহায়তায় লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন।
গাজীপুর জেলার পিবিআই ও সিআইডি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহের ছবি সংগ্রহ করে এবং লাশটি সম্পূর্ণ পঁচনযুক্ত হওয়ায় আঙ্গুলের ছাপ নেয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা মৃতদেহের পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি। পরে মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এসআই সজীব হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে শ্রীপুর থানা প্রায় ২ মাসের অধিক সময় তদন্ত করেন। তদন্তাধীন অবস্থায় মামলাটির কোন তথ্য উৎঘাটিত না হওয়ায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে পরবর্তী তদন্ত সমাপ্ত করার জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলার উপর ন্যাস্ত করা হয়।
পিবিআইয়ের এসআই জহিরুল ইসলাম প্রায় এক বছর তদন্ত করে মামলাটির রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত ৩জনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি এলাকার মো. আবুল হোসেনের সন্তান মো. মোখলেসুর রহমান (৩১), ওয়াজ উদ্দিনের সন্তান মো. খোকন মিয়া (২৭), মো. মাসুদ রানার সন্তান মো. রাজীব মোড়ল (২৬)।
পিবিআই গাজীপুর ইউনিটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। থানা পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করেও রহস্য উৎঘাটন করতে না পারায় মামলাটির পরবর্তী তদন্তভার পিবিআই এর উপর ন্যাস্ত হলে মামলার নথিপত্র, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামিদেরকে গ্রেফতার করলে মামলার প্রকৃত রহস্য উৎঘাটন করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা পূর্বেও একাধিকবার রাতের বেলা ইয়াবা সেবন করে অনৈতিক কার্যকলাপ করেন। আসামিরা ঘটনার বিস্তারিত বর্ননা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।