ফাইল ছবি
এ বছর ঘোষিত স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত দশ ব্যক্তির মাঝে তিনজনই ময়মনসিংহ নগরীর বাসিন্দা। শুক্রবারে মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। পুরষ্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) ও ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, সেইসাথে বাসায় গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।
জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে অনেকের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। পুরষ্কারপ্রাপ্ত তিনজন হলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডাঃ হরিশঙ্কর দাশ, সমাজসেবায় অরন্য চিরান ও ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুন। এর আগে ময়মনসিংহ জেলা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি এই পদকে ভূষিত হলেও একসাথে তিনজন এই পদক পাবার ঘটনা এটাই প্রথম। এই তিন ব্যক্তির অবদান ও কর্মকান্ড ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো-
ডা. হরিশঙ্কর দাশ
বৈশ্বিক মহামারী করোনার সময় সর্বাত্মক লকডাউনে সকলেই নিরাপদ আশ্রয়ে ঘরে আবদ্ধ। সকল চিকিৎসকদের চেম্বার বন্ধ ঠিক তখন জীবনবাজি রেখে সৃষ্টি কর্তার উপর ভরসা করে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন নিয়মিত। একদিনের জন্যও বন্ধ করেননি নিজের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসার পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী ও সামাজিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন নিয়মিত।
১৯৭৪ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন তিনি। এরপর দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পর ১৯৮২ সালে চাকরি ছেড়ে দেন এবং ১৯৮৪ সালে নগরীর চরপাড়ায় গড়ে তোলেন ‘পারমিতা চক্ষু ক্লিনিক’ নামে নিজের প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই দরিদ্র অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন তিনি। এখনও প্রতিদিন গড়ে দুই ঘন্টা বিনামূল্যে রোগী দেখেন। গরীব রোগীদের ওষুধের ব্যবস্থাও করে দেন অনেক সময়। নিজেও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত কিন্তু তারপরও তিনি রোগীদের সেবা দেয়া একদিনের জন্যেও বন্ধ রাখেননি। এছাড়া তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংবাদিকদের চিকিৎসার জন্য কোন ফি নেন না। ময়মনসিংহের এক সজ্জ্বন ব্যক্তি ডা. হরিশঙ্কর দাশ। সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ক্রীড়া, সেবাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে যুক্ত থাকা নির্লোভ-নির্মোহ ডা. হরিশঙ্কর দাশ সাধারণ মানুষের কল্যানেই থাকতে চান আজীবন।
অরন্য চিরান
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী গারো জাতিসত্বার কবি ও গবেষক অরন্য চিরান। শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার নেতাই নদীর তীরে দীঘলবাগ গ্রামে। গারো-হাজং আদিবাসিদের বাস। অদিবাসীদের অধিকার আদায়ে তরুণ বয়স থেকেই নিজেকে যুক্ত রাখেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে। সেই ধারাবাহিকতায় আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণে এখনও সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। গারো আদিবাসীদের ওয়ানগালা উৎসবসহ অন্যান্য রীতি-আচারে তাঁকে অগ্রণী ভুমিকায় দেখা যায়। এছাড়া গারো স্টুডেন্টস এসোসিয়েশেনের উপদেষ্টা, জেলা শিল্পকলা একাডেমির আহ্বায়কসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন নিয়মিত। ব
ছর দশেক আগে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ডিগ্রী অর্জনের পর বর্তমানে পিএইচডি রিসার্চ ফেলো হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবু দেওয়ানের তত্বাবধানে গবেষণা করছেন। অরণ্য চিরান হাজং জনগোষ্ঠীদের নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে এতিম ও পথশিশুদের আশ্রয়ণকর্মেও ভূমিকা রেখে চলেছেন ।
ফিরোজা খাতুন
জাতীয় পর্যায়ে দশবারের দ্রুততম মানবী ফিরোজা খাতুন থাকেন নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডে। ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ দ্রুততম মানবীর খেতাব জয় করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি আর ট্র্যাকে খুব একটা নামেননি। ১শ মিটার দৌড়ের পাশাপাশি ২শ মিটার লং জাম্পেও তিনি বিভিন্ন পদক জয় করেছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর সর্বোচ্চ অর্জন ব্রোঞ্জ পদক। খেলাধূলা থেকে সড়ে আসার পর থেকে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে। বর্তমানে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় তৈরির নেপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এর আগে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দশবার দ্রুততম মানবী হয়েছিলেন তিনি। পুরস্কার প্রাপ্তির পর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, এই পুরষ্কার প্রাপিÍ নিঃসন্দেহে অনেক আনন্দের এবং গর্বের। ভবিষ্যতে তিনি ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের অবাধ ও অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করে যাবেন বলে ইচ্ছা পোষণ করেন। এই অর্জনের আগে ২০১৩ সালে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার লাভ করেন। ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মিত চিরচেনা মুখ ফিরোজা খাতুন।