Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আশ্বিন ২ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যবিপ্রবি উপাচার্য ও তার অনুসারীদের পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

কাজী রকিবুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ২০ আগস্ট ২০২৪

প্রিন্ট:

যবিপ্রবি উপাচার্য ও তার অনুসারীদের পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

ছবি- সংগৃহীত

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন,  রেজিস্ট্রারসহ  উপাচার্যের  অনুসারীদের আগামি ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।  মঙ্গলবার বিকালে যশোর প্রেসক্লাব  যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে এই আল্টিমেটাম দেয় তারা।

একই সাথে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে উপাচার্য সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ না করলে তাকেও শেখ হাসিনার মতো অবস্থা হবে বলে হুশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকালে ভিসিসহ তার অনুসারীদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসাবে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ভিসির পদত্যাগসহ তার অনিয়ম দুনীর্তির বিচারের দাবি তোলেন। একই সাথে ভিসিকে স্বৈরাচার ও শেখ হাসিনার দালাল আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন স্লোগানও দেন তারা। এদিকে পদত্যাগের দাবির পর থেকে স্বসরিরে উপস্থিত হচ্ছেন ভিসিসহ তার অনুসারীরা। ফলে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে থাকাতে নিয়মিত একাডেমি পরীক্ষা ও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে সেজনজটের।

এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন,তাদের আল্টিমেটামকে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না। ইতোমধ্যে আমি পদত্যাগ করার সিন্ধান্ত নিয়েছি। পদত্যাগ পত্র সাক্ষরও করেছি। কিন্তু চলমান ২৪টা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক আমি। শিক্ষার্থীদের আমানতের দায়িত্ব থেকে করতে পারছি না। সময় হলেই সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে আমার পদত্যাগ জমা দিবো। কিন্তু শিক্ষার্থীদের লেখা পদত্যাগে আমি সাক্ষর করবো না। তবে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আমার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করতে হবে না। ধারণা করছি চলতি সপ্তাাহেই দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সরিয়ে দিবে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তর। ফলে শিক্ষার্থীদের  পড়াশোনাতে মনোযোগ দিয়ে দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন তিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিকালে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালের ২০মে  ভাইস চ্যান্সেলর পদে যোগদান করেন। চাকরির প্রথম মেয়াদে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ৫৫ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি ২০২১ সালের ১৯ মে ভিসি পদের মেয়াদ শেষ করেন। একই বছরের ১ জুন দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পান তিনি। অভিযোগ উঠেছে, নানা দুর্নীতির মধ্যে তিনি যবিপ্রবির ১৪ লিফট স্থাপন নিয়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়ম করে আলোচিত হন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরপর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন। একে একে দেশের দুনীর্তিবাজ ভিসি ও কর্মকর্তারা পদত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কলঙ্কমুক্ত করেছে। কিন্তু আমাদের ভিসি আন্দোলনের পরেও তিনি তার চেয়ার আঁকড়ে রয়েছেন। আমরা আর এই দুনীর্তিবাজ ও রাজনীতিক দলের দালালের অধীনে কোন কার্যক্রম আর চাই না।  

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেকা শাহানী ঊমি বলেন, ‘আমরা যখন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করি। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবাসে বহিরাগত, বহিস্কারকৃত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। তখন ভিসি আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। তিনি যখন তার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে পারেনি, তখনই তিনি ভিসির দায়িত্ব থেকে সরে দাড়ানো উচিত ছিলো। কিন্তু তিনি তার দুনীর্তির তথ্য লোপাট করতে পদত্যাগ করছেন না। আমরা গত দুই সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করছি, সেই আন্দোলনের কোন গুরুত্ব না দিয়ে তিনি তার পদেই আছেন। এই দুনীর্তিবাজ ভিসি ও রেজিস্টারসহ তার অনুসারীরা যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে তার অবস্থা শেখ হাসিনার মতো হবে। একই সাথে আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদৃষ্টাদের কাছে স্মারকলিপি দিবো।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইজ্ঞিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব হোসেন বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী যারা দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরী নিয়েছেন তাদেরকেও স্বসম্মানে পদত্যাগের দাবি জানায়। শিক্ষার্থীদের পূর্ণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষনাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় তাই আমরা এই ক্যাম্পাসে কোন ধরণের রাজনীতি চাই না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচিত করে তারাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে কাজ করবে।’

পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উসামাহ বলেন, আমাদের একটাই দাবি আমরা স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের মদদপুষ্ট দালাল ভিসি আমরা চাইনা কারণ উনি কখনোই শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য ছিলেন না। আমরা উপাচার্যসহ সকল দালাল সিন্ডিকেটকে বলতে চাই আপনারা স্বসম্মানে পদত্যাগ করুন। তা না হলে শিক্ষার্থীরা কি করতে পারেন সেটা বোঝা আপনাদের বাকী নেই। আপনারা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। তার মতোই আপনাদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী আকিব ইবনে, হাবিব আহমেদ শান্ত, সিয়ামুল ইসলাম, আবু দাউদ মহির, ফারজানা ইয়াসমিন কেয়া, অরত্রিকা হক শ্রেষ্ঠা।  

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. ইকবাল কবির জাহিদসহ উপাচার্যের অনুসারীদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি শুরু করে। ঐ দিন একই দাবিতে যবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধু ম্যাুরাল, শেখ হাসিনা ম্যাুরাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের বঙ্গবন্ধুর নাম ও বঙ্গবন্ধু একাডেমিকের গ্যালারির সামনে ছবি ভাস্কর্য্য ভাঙচুর করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা। পরে দিন কর্মসূচি থেকে ভিসির বাসা ও প্রশাসনিক ভবন তালা মেরে দেয় শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। চলমান আন্দোলনের পেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এছাড়া পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ এবং উপাচার্য একান্ত সচিব মোঃ আব্দুর রশিদও। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ আনিছুর রহমান, শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোঃ তানভীর ইসলামসহ হলটির সকল সহকারী প্রভোস্টবৃন্দ।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer