ছবি- সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের এক দফা—মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে ৫ আগস্ট। সেদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে চলে যান।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জানাতে বঙ্গভবনের দরবার হলে যান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তখন রাষ্ট্রপতির জন্য অপেক্ষা করছিলেন অতিথিরা। আসনে বসে আছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমর্ষ ও ভীতসন্ত্রস্ত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দরবার হলে প্রবেশ করেন। একে একে সবার সঙ্গে হাত মেলালেন। বিষন্ন রাষ্ট্রপতির হাত তখন কাঁপছে। এই দৃশ্য দরবার হলে সামনের সারিতে বসা রাজনীতিকদের দৃষ্টি এড়ায়নি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর বঙ্গভবনের দরবার হলে মাগরিবের নামাজের পর রাজনৈতিক নেতারা ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয় রাষ্ট্রপতির। এর আগে ক্যান্টেনমেন্টেই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকা-উজ-জামান।
সেদিন বঙ্গভবনে যা ঘটে
উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি সে সময়কার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, প্রেসিডেন্ট এসে সবার সঙ্গে হাত মেলালেন। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর মান্নাকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর আমাকে সাইফুল ভাই বলে জড়িয়ে ধরেন। যদিও তার সঙ্গে আগে কখনো দেখা হয়নি। সে সময় তিনি অস্থির ছিলেন, কাঁপছিলেন।
বঙ্গভবনে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা শেখ মোহাম্মাদ মাসউদ। সেই সন্ধ্যার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি যখন সামনে বসা জাতীয় নেতাদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলেন, তখন তিনি ছিলেন খুবই বিমর্ষ। তার সঙ্গে হাত মেলানোর সময় তিনি কাঁপছিলেন। তিনি ছিলেন ভীত ও সন্ত্রস্ত। বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিমর্ষ ও হতাশ।
রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে হাত মেলানোর পর রাষ্ট্রপতি তার আসনে বসেন। এরপর সূচনা বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেনাপ্রধান জানান, আমরা জাতীয় নেতাদের নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বসেছিলাম। এই পরিস্থিতিতে আমরা আলোচনা করেছি একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার বিষয়ে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে আসায় তিনি ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দেয়া দরকার। এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়া প্রয়োজন।