সংগৃহীত
বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর এক-পঞ্চমাংশের বেশির জন্য দায়ী তামাক ব্যবহার। সিগারেট-সহ অন্যান্য মারাত্মক ক্ষতিকারক তামাক পণ্য বিক্রি থেকে সরকার যে রাজস্ব পেয়ে থাকে তার তুলনায় তামাক ব্যবহারজনিত স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেকখানি বেশি। তাই সিগারেটে করারোপ বিষয়ক নীতি-ভাবনায় রাজস্ব আহরণ নয় বরং জনস্বাস্থ্যই প্রধান বিবেচ্য।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর ২০২৪) ঢাকায় সামরিক জাদুঘরের সেমিনার হলে আয়োজিত ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক সেমিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে এই আলোচনায় আসন্ন অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ বিষয়ে মতবিনিময় করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর-এর) প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, তামাক-বিরোধী গবেষক, বিভিন্ন নগারিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ। বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. এস. এম. জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন উন্নয়ন সমন্বয়ের বিআইডিএস-এর প্রফেসরিয়াল ফেলো ও কৃষি অর্থনীতিবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম. এ. সাত্তার মণ্ডল।
এনবিআর-এর পক্ষ থেকে আলোচক হিসেবে অংশ নেন- এনবিআর-এর সদ্যসাবেক সদস্য ড. মো. সহিদুল ইসলাম, ট্যাক্স পলিসির প্রথম সচিব মির্জা মো. মামুন সাদাত, এবং ভ্যাট পলিসির প্রথম সচিব মো. মশিউর রহমান। এছাড়াও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- অর্থনীতিবিদ এবং গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক, এবং সিটিএফকে-এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী প্রেক্ষাপট পত্র উপস্থাপনের সময় আসন্ন বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি হারে সকল স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এনবিআর প্রতিনিধি মামুন সাদাত সিগারেট ব্যবহারের মাত্রা কমাতে সিগারেটের বিদ্যমান কর-কাঠামো সংস্কারের আহ্বান জানান, এবং মো. মশিউর রহমান বাজেট চুড়ান্ত হওয়ার যথেষ্ট আগে সিগারেটে কার্যকর করারোপের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরার জন্য তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
সিগারেটে যথাযথ করারোপ না করায় সরকার বছরে ৬,৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক বলেন যে, সিগারেটে কার্যকর করারোপের মাধ্যমে সরকার জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি তার রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়াতে পারে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সাত্তার মণ্ডল তামাক শিল্প মোট হিসেবে দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক বলে অভিমত দেন এবং নীতি-নির্ধারকদের সিগারেটে কার্যকর করের ক্ষেত্রে আপোসহীনভাবে অগ্রসর হতে আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ড. জুলফিকার স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলোর প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের। উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অফ প্রোগ্রাম শাহীন উল আলম সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।