ফাইল ছবি
প্রোপাগান্ডার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের একটি টেলিভিশনের বিনিয়োগকারীদের চাপ দিয়ে ৫ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করানো হয়েছে বলে বিনিয়োগ বিষয়ক ম্যাগাজিন ব্যারনস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ গত ১৭ ডিসেম্বর প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে সময় টেলিভিশনে বিনিয়োগকারী সিটি গ্রুপের অফিসে যান। হাসনাত এএফপিকে বলেন, আমার মন্তব্য নিয়ে সময় টেলিভিশন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছিল এবং একটি পতিত রাজনৈতিক দলের মতামতকে স্থান দিচ্ছিল।
হাসনাত বলেন, আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কট্টর সমর্থক, কিন্তু সংবাদপত্রকে অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তিনি দাবি করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখেন না। কিন্তু সাংবাদিকদের বরখাস্ত করার জন্য তালিকা হস্তান্তরের বিষয়টি তিনি প্রত্যাখান করেন।
সময় টিভিতে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সময় টিভির সিনিয়র এডিটর সাংবাদিক ওমর ফারুক বলেন, বরখাস্তকৃত পাঁচজনের মধ্যে তিনি ছিলেন। কারণ ছাড়াই বরখাস্তের চিঠি পেয়েছেন তিনি।
ফারুক এএফপিকে বলেন, টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ আমাদের কয়েকজনকে স্টেশনের বৃহত্তর ভালোর জন্য পদত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করেছিল। আমরা সিদ্ধান্তের জন্য একটি ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কিছু দিতে অস্বীকার করে।
এদিকে সময় টিভি থেকে ছাঁটাই হওয়া আউটপুট এডিটর আরিফুল সাজ্জাত এই প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেন, ‘কর্তৃপক্ষ (বিনিয়োগকারী সিটি গ্রুপ) জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা তাদের হুমকি দিয়েছে সময়ের ১০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করতে হবে, নাহলে তারা বাঁচতে পারবে না।’
আরিফুল সাজ্জাত লিখেন, ‘এনিয়ে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংসহ সবার সঙ্গে কথা বলি। তারা আশ্বস্ত করে কোনো বিবেচনাতেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা বিনিয়োগকারীদের সেটা জানাই। তারপরও গত রবিবার সিটি গ্রুপ ওই তালিকা থেকে পাঁচ কর্মীকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত জানায়।’
তিনি লিখেন, ‘আমরা অনেকেই অভ্যুত্থানের সময়ও পতিত সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্র জনতার আন্দোলনের খবর প্রচার করেছি। (আমি তখন নিউজ ২৪ এ কর্মরত ছিলাম।) ওই সময়ের নির্বাহীরা পুরো বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রচার করতে দেয়নি। সেটা সবাই জানে। সময়ের ভূমিকা নিয়েও নতুন করে বলার কিছু নাই। তবে গণমাধ্যমটি ৫ আগস্টের পর তাবেদারির নীতি বাদ দিয়ে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রচার করতে থাকে। ফলে দর্শকপ্রিয়তায় পেছনে চলে যাওয়া চ্যানেলটি শিগগিরই আবার শীর্ষস্থানে আসে।’
তিনি বলেন, ‘যেভাবে পেশাদার সংবাদকর্মীদের বাদ দেয়া হলো, সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এর নিন্দা আর প্রতিবাদের ভাষাও জানা নেই। এই সময়েও স্বাধীন গণমাধ্যম যে শুধু কথার কথা, সেটাই আমরা দেখছি। আর বিষয়টি জানার পরও দায়িত্বশীলদের শুধু ‘উঁহু আহা’ প্রতিক্রিয়া, আমাদেরকে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার শাসনামলকেই মনে করিয়ে দেয়।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চান। ইউনূসের প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেছেন, যদি কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়, দায় তাদের ওপর বর্তায়।
প্রেস ওয়াচডগরা বলেছেন, অনেক সাংবাদিক-সমালোচকেরা হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকাকালীন সমর্থন করেছিলেন বলে দেখেছেন। তাদের অতীত কাজের জন্য আপাত প্রতিশোধের জন্য পুলিশের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। অন্তত চারজন সাংবাদিককে কারারুদ্ধ করা হয়েছে এবং সারাদেশে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
হাসিনা এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল বন্ধ করা এবং সাংবাদিকদের কারারুদ্ধ করাসহ মুষ্টিমেয় স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর অযৌক্তিক চাপ প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে। হাসিনার সরকারের পতনের পর সময় টিভিসহ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্যের অভিযোগে আক্রমণের মুখে পড়ে। নভেম্বরে, বিক্ষোভকারীরা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের অফিস ঘেরাও করে এবং বন্ধ করার হুমকি দেয়।
বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দীর্ঘদিন ধরে হুমকির মুখে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস অনুসারে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম।