ছবি- সংগৃহীত
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন। সেখানে আট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আসবাবসহ গুরুত্বপূর্ণ নথির হার্ড কপি পুড়ে গেছে। ছাই হয়ে গেছে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ। যেসব জিনিস পোড়েনি, তা ভেসে গেছে পানির তোড়ে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন ৭ নম্বর ভবন দেখে মনে হলো, পোড়া বাড়ি। যদিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ দপ্তরে ঢুকতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি। আগামী রোববার কর্মদিবসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোথায় বসবেন, তা রাত পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে অষ্টম ও নবম তলায়। এখানে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়। সাততলার পুরোটা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ছয়তলায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চলে। আর পাঁচতলায় রয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি দপ্তর।
স্থানীয় সরকারের এক নারী কর্মকর্তা ছয়তলায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভাঙা জানালা দেখিয়ে বলছিলেন, তাঁর কক্ষের কোনো অস্তিত্ব নেই। ওপরে যেতে পারলে বোঝা যেত কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে?
মাঝখানের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় পাঁচতলা পর্যন্ত আগুনের ক্ষতি পাওয়া যায়নি। তবে আগুন নেভানোর কারণে পানি ও ভেজা ছাইয়ের স্তূপ রয়েছে। বাকি চারতলা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি কক্ষের সবকিছু পুড়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালের অংশ খসে পড়েছে। সিঁড়িও ধসে গেছে। ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জানালার ভাঙা কাচ। ভবনের দক্ষিণ পাশে পুড়ে মরে পড়ে ছিল কয়েকটি কবুতর।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবম তলা পর্যন্ত আগুনে ক্ষতি হয়েছে। ভেতরের সবকিছু পুড়ে গেছে। আগুন নেভানোর সময় তাদের অনেকে আহত হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগলেও বড় বড় গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। বাধ্য হয়ে সচিবালয়ের গেট ভেঙে দুটি বড় গাড়ি ঢোকানো হয়।
অগ্নিকাণ্ডের কারণে সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনে গতকাল দিনভর বিদ্যুৎ ছিল না। লিফটগুলো ছিল বন্ধ। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ে এলেও দাপ্তরিক কাজ করতে পারেননি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারী জানান, তাদের মন্ত্রণালয়ের একাংশ পুড়ে গেছে। পুরো ভবন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকায় কর্মীরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে আসেন। ছয় নম্বর ভবনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মী আফসানা আক্তার বলেন, আমাদের ভবনে বিদ্যুৎ ছিল না। সেজন্য সবাই বাইরে অবস্থান করেন।
এদিকে গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, সরকারের বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী, গণপূর্ত সচিব হামিদুর রহমান খান, শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, আইজিপি বাহারুল আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পরে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের ব্যর্থ করার এ ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।’