
ছবি- সংগৃহীত
সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। শনিবার মধ্যরাত থেকে সারাদেশে এই অভিযান শুরু হয়। এই অপারেশন পরিচালনার কমান্ড সেন্টার করা হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তরে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী, খুনি ও চাঁদাবাজকে টার্গেট করে অভিযান চলবে।
এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও গ্রেপ্তার হবেন অভিযানে। আগস্টে দেশের বিভিন্ন থানা লুট করে নেওয়া অস্ত্র উদ্ধারও এ অভিযানে গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকমেজর এমদাদুল ইসলাম (অবসরপ্রাপ্ত) গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, সেনাবাহিনীর কাজ দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে দায়িত্ব পালন করেছে। এখন ‘ডেভিল হান্ট’ নাম দিয়ে আবার অপারেশনে নামানো হচ্ছে। কী ধরনের অপারেশন তারা চালাবেন, সেই ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত না। তবে সামরিক বাহিনীকে যেন কোনোভাবেই দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মুখোমুখি না করা হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশের কাজ। পুলিশে এই জায়গা ব্যর্থ হলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক। পুলিশের কাজ সেনাবাহিনীকে দিয়ে করাতে যাবেন না। তাহলে সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে পারে।
মেজর এমদাদুল ইসলাম (অবসরপ্রাপ্ত) গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, সেনাবাহিনীর কাজ দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে দায়িত্ব পালন করেছে। এখন ‘ডেভিল হান্ট’ নাম দিয়ে আবার অপারেশনে নামানো হচ্ছে। কী ধরনের অপারেশন তারা চালাবেন, সেই ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত না। তবে সামরিক বাহিনীকে যেন কোনোভাবেই দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মুখোমুখি না করা হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশের কাজ। পুলিশে এই জায়গা ব্যর্থ হলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক। পুলিশের কাজ সেনাবাহিনীকে দিয়ে করাতে যাবেন না। তাহলে সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ছিল মূল চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হচ্ছিল। এরপর সশস্ত্র বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামালেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না আইনশৃঙ্খলা। থানা থেকে লুট হওয়া বিপুলসংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। ডাকাতি-ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ থামানো যাচ্ছিল না। পুলিশের ওপর হামলা ও আসামি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাতে গাজীপুর নগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার শিকার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন। এতে ১৩ জন গুরুতর আহত হন। গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর এ হামলার ঘটনার পর ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি বৈঠকে অপারেশন ডেভিল হান্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
অপারেশনের প্রয়োজনীতার ব্যাপারে সূত্রগুলো দাবি করছে, দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরিকল্পনা করছে। বর্তমান সরকার নমীয়ভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও অপরাধীরা সেটাকে দুর্বলতা ভাবছে। জুলাই আন্দোলনের সময় লুট হওয়া অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশি অস্ত্র দেশে ঢুকিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে বড় ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাদের যড়যন্ত্র থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে এই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের ভার্চুয়াল কনভারসেশনের একটি অডিও ক্লিপট ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে। যেখানে গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনকে বলতে শোনা যায়Ñ ‘রাজধানীবাসীকে শান্তিতে ঘুমোতে দেওয়া হবে না। তার জন্য কি কি করতে হবে তা আমরা জানি’। এ জন্য দেশে থাকা নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারাই এগুলো বাস্তবায়ন করছে’।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পরেও মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা শঙ্কা কাটেনি। আতঙ্ক ছড়াচ্ছে খুন, ডাকাতি ও ছিনতাই। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা ও আসামি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার কারণে পুলিশের প্রতি মানুষ আস্থা ও ভরসা পাচ্ছে না। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন এবং আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বাসস্টেশন ও বাজারঘাটে চাঁদাবাজিতে মানুষ অতিষ্ঠ। রাতে মানুষ ঘর থেকে বের হতেও ভয় পায়। এখন অপারেশন ডেভিল হান্ট জনমনে স্বস্তি আনতে পারে বলেন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারাদেশেই নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান বলেন, রাজধানী ঢাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে চেষ্টা করছি ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদ উৎখাত করা হবে : জিএমপি কমিশনার : এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশব্যাপী আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে দমন করার জন্য ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান পরিচালনার। এর মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে এ দেশ থেকে উৎখাত করা হবে। যারা অন্যায় করেছে, গুম করেছে এবং নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের বিচার হবে। তিনি আরও বলেন, চিরুনি অভিযান হবে। চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে প্রত্যেক অপরাধীকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
অতীতের অভিজ্ঞতা : ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ট নামে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়েছিল। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায় এ অভিযান চালানো হয়। দেশে তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। ঢাকার রাস্তায় একের পর এক ওয়ার্ড কমিশনারদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছিল। এ ছাড়া হত্যা এবং ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বেসামাল হয়ে পড়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় সরকার। পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল সেটি তারা বুঝতে পেরেছিলেন। একই সঙ্গে তারা এটাও অনুধাবন করেন যে পরিস্থিতি এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পুলিশকে দিয়ে সেটি আর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এমন প্রেক্ষাপটে ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে সারাদেশে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে একযোগে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী।