
ছবি- সংগৃহীত
শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিকাল ৪টা থেকে বাসন হাতে ভুখা মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন শ্রম ভবনের সামনে অবস্থানরত গার্মেন্টস শ্রমিকরা। এতেও দাবি পূরণ না হলে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেবেন তারা।
শ্রমিকদের পাওনা মজুরি ও বোনাস নিয়ে শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় শ্রম ভবনের সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শ্রমিক নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন অ্যাপারেলস প্লাস ইকো লিমিটেডের শ্রমিক সফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে শ্রম উপদেষ্টা চরম মিথ্যাচার করেছেন। শ্রমিক সমাজ তা মেনে নেয়নি। তাই আমরা আবারও রাজপথে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না।’ এছাড়াও তিনটি কারখানার কাছে পাওনা টাকার পরিমাণও তুলে ধরেন তিনি। এতে উল্লেখ করা হয়, ৬ কোটি ৭৫ লাখ বকেয়ার বিপরীতে বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) পরিশোধ করা হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
সাংবাদিকদের শ্রমিক নেতারা জানান, অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড এবং টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড ও অ্যাপারল আর্ট লিমিটেডের শ্রমিকদের তিন মাসের বকেয়া বেতন ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে ইতোপূর্বে মালিক-শ্রমিক-সরকার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করা হয়। কিন্ত মালিকপক্ষ তা ভঙ্গ করেছে। তাই গত ২৩ মার্চ সকাল থেকে শ্রম ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা।
তারা জানান, কর্মসূচির তৃতীয় দিন শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিলেও কেউ যোগাযোগ না করায় শ্রম মন্ত্রণালয় অভিমুখে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। ছাত্রনেতা দিলীপ রায়কে মারধর করা হয়। লাঠিপেটায় আহত ২০ শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারের মধ্যে আমাদের পাওনা পরিশোধের জন্য কর্মসূচি চলমান রাখি।
শ্রমিক নেতারা বলেন, শ্রম সচিব আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যেই পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু গতকাল দুপুর পর্যন্ত আমাদের নেতারা দফায় দফায় ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। অথচ তার সরবরাহ করা তথ্য দিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে শ্রম উপদেষ্টা সংবাদ ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, মালিকপক্ষ নাকি গাড়ি বিক্রি করে আমাদের পাওনা পরিশোধ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনও মিল নেই। গাড়ির দাম কত? শ্রমিকের পাওনা কত? অ্যাপারেল ইকো প্লাস কারখানার তিন মাসের টাকা ও ঈদ বোনাসের মধ্যে শুধু জানুয়ারি মাসের ৭০ শতাংশ টাকা দিয়ে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে সব দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডে ফেব্রুয়ারি বেতন ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৪১ হাজার; মার্চ মাসের বেতন ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা; ঈদ বোনাস ১ কোটি ৬৯ লাখ ৪০ হাজার।
অ্যাপারেলস ইকো প্লাসে শ্রমিক-কর্মচারী সংখ্যা ৮২৬ জন। জানুয়ারির বেতন ১ কোটি ৪৩ লাখ; ফেব্রুয়ারির বেতন ১ কোটি ৪৩ লাখ; মার্চের বেতন ১ কোটি ৪৩ লাখ; ঈদ বোনাস ৭০ লাখ; ছুটির টাকা ১ কোটি ২৫ লাখ; খোরাকি ভাতা ৬০ লাখ; মোট ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বকেয়। এর মধ্যে ২৭ মার্চ পরিশোধ করা হয় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
অ্যাপারেল আর্ট লিমিটেডে মোট শ্রমিক ২৪০। ডিসেম্বরের বেতন ৪০ লাখ ৮২ হাজার; জানুয়ারির বেতন ৪১ লাখ ১৫ হাজার; ফেব্রুয়ারির বেতন ৪১ লাখ ৫৭ হাজার; মার্চের বেতন ৪১ লাখ ৬২ হাজার; ঈদ বোনাস ২৪ লাখ ২১ হাজার; ছুটির পাওনা ১৪ লাখ ৮০ হাজার।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস-টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, সোয়েটার গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনে, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি, শ্রমজীবী আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।