
ফাইল ছবি
রাজধানীর ওয়ারীর একটি বাসা থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত ৯টার দিকে ওয়ারী স্ট্রিট জমজম টাওয়ারের পাঁচতলার একটি কক্ষ থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
মৃতরা হলেন: কুমিল্লার তিতাস উপজেলার আড়াইকান্দি গ্রামের মো. মুসার ছেলে মোহাম্মদ মুঈদ (৩২) এবং তার স্ত্রী আইরিন আক্তার রত্না (৩৫)। রত্না জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জয়নাল আবেদিনের মেয়ে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাউছার আহাম্মদ জানান, মুঈদের মরদেহ অর্ধগলিত অবস্থায় বিছানার ওপর পাওয়া যায়। একই বিছানায় মৃত অবস্থায় পড়েছিলেন তার স্ত্রী রত্না। সিআইডি ক্রাইম সিন মরদেহের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।
এসআই আরও জানান, ওই বাসায় স্বামী ও স্ত্রী দুজন থাকতেন। তারা কারো সঙ্গে তেমন যোগাযোগ করতেন না। এক কাজের বুয়া ওই বাসায় কাজ করতেন। তবে দুই মাস যাবত কাজের বুয়ার বেতন দিতে পারছিলেন না তারা। গত ঈদের পরে বেতন দেয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে বেতন নেয়ার উদ্দেশ্যে কাজের বুয়া ওই বাসায় যান এবং অনেকক্ষণ কলিংবেল টিপেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চলে যান। এরপর শনিবার বিকেলে আবার এসে বাড়িওয়ালার মাধ্যমে ওই বাসায় যান। তখন অনেকক্ষণ কলিংবেল টিপে সাড়াশব্দ না পেয়ে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে কেচিগেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মরদেহ দুটি পড়ে থাকতে দেখে। পাশেই একটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল, ‘বিয়ের পর আমার বাবা-মা, স্বামীর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নাই। আমাদের দুজনের মরদেহ ঢাকাতে কোনো সরকারি কবরস্থানে দাফন দিয়েন। আমার এবং আমার স্বামীর বাড়িতে নেয়ার দরকার নাই।’
এসআই জানান, মুঈদ দীর্ঘদিন যাবত ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। তার স্ত্রী রত্না বাসার বাইরে কোথাও বের হতেন না। ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী ৪-৫ দিন আগে মারা গেছেন। এই শোকে স্ত্রী বিষাক্ত কিছু সেবন করে আত্মহত্যা করতে পারেন। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
এদিকে, মৃত মুঈদের বড় ভাই ডা. মুগলী সানি জানান, তাদের সঙ্গে ২০২১ সালের পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই পরিবারের। ঢাকার কোথায় থাকত তাও তারা জানত না। মুঈদ আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিল। শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের মাধ্যমে তাদের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানতে পারে পরিবার। তবে কীভাবে তারা মারা গেছেন তা কারো জানা নেই।
ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল আহমেদ জানান, স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। স্ত্রী টুকটাক কাজ করতেন। তারা আর্থিক অভাব অনটনে ছিলেন। বাড়ি ভাড়াও দিতে পারতেন না। মরদেহ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী তিন থেকে চারদিন আগে মারা গেছে। আর স্ত্রী স্বামীর দু-একদিন পরে মারা গেছে।