ছবি: বহুমাত্রিক.কম
মেঘালয়ের বিভিন্ন পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা অতি বৃষ্টির কারণে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌরসভা ও হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া উপজেলায় ১৯ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে ফলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকের রোপণকৃত আমন ফসল, সবজি বাগান ও মাছের খামারসহ বিস্তীর্ণ মাঠ। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। গরু ছাগল হাঁস মুরগি নিয়েও বিপাকে অনেকে।
বন্যা দুর্গত এলাকায় অধিকাংশ পরিবারে গত তিনদিন ধরে রান্নার চুলা জ্বলছে না। শুকনো খাদ্য না থাকায় অনেকেই অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ থাকায় দূর্গত এলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগও সম্ভব হচ্ছে না। তাদের কাছে তেমন কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি বলে জানান তারা। ঢলের পানি ও বৃষ্টি কিছুটা কমলেও দুর্গত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি।
হালুয়াঘাট উপজেলা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ১১টি আশ্রয়স্থলে প্রায় হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের শিশুসন্তান গরু ছাগল নিয়ে কোনমতে দিন কাটাচ্ছে। ভয়াবহ এই পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট উপজেলাকে তছনছ করে দিয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলে প্রতিটি বাড়িতে বুক সমান পানি প্রবেশ করেছে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম শনিবার দুপুরে হালুয়াঘাট সদরে ডি এস মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বন্যা দুর্গত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ কাজ চলছে।
স্থানীয়রা জানায়, দুদিনের টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেওয়াল, মেনেং ও বোরাঘাট নদীর বিভিন্ন অংশে পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। মুহূর্তের মধ্যেই বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় ঘরের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কোন সুযোগ ছিলনা। কোনমতে পরিবারের লোকজনদের নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হল।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি প্রবেশ করায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীরা সেবা নিতে বঞ্চিত হয়েছে। যথেষ্ট নৌকা না থাকায় উদ্ধার তৎপরতা চোখে পড়ছে না তেমন। ঘরের ভিতর পানির মধ্যে যুদ্ধ করে রাত কাটাতে হয়েছে অনেকের। কোন পরিবারে খাটের উপরেও পানি উঠেছে। চলাচলের রাস্তা না থাকায় কোমর পর্যন্ত পানি নিয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে সারারাত। সকালে তাদের আত্মীয়-স্বজন এসে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান ভুক্ত ভোগী পরিবারের লোকজন।
উপজেলা হালুয়াঘাট নির্বাহী কর্মকর্তা, এরশাদুল আহমেদ জানান, পানিবন্দি মানুষের উদ্ধার তৎপরতা চলমান সহ বন্যায় কবলিত মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন তারা। এছাড়াও সেনাবাহিনী, জনপ্রতিনিধি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিয়েছে।
নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে সাতটি ইউনিয়নের প্রায় হাজার পরিবার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ পুরো উপজেলা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
শুক্রবার বিকালে উপজেলার কলসিন্দুর, জিগাতলা এবং পঞ্চনন্দপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্ট নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে পুরো উপজেলা প্লাবিত হয়।
শনিবার (৬ অক্টোবর) বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকায় রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের এত দুর্ভোগেও প্রশাসনের নেই কোনো ত্রাণ কার্যক্রম। বন্যাকবলিত মানুষরা সেখানে দ্রুত এাণ পাঠানোর জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।
শনিবার সকালে উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ সময় উপজেলার গোসাইপুর গ্রামের আব্দুল কদ্দুস নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, গত শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ঘরের মধ্যে পানি। রান্না করার চুলা পানির নিচে। না খেয়ে ঘরের মধ্যে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসে আছি।
কলসিন্দুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন নামের আরেকজন বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।রান্না করার জন্য বাজার থেকে গ্যাসের বোতল কিনে আনলেও আর রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাসের বোতলও পানিতে ভাসিয়ে গেছে। রাত থেকে পরিবারের লোকজন না খেয়ে আছে। সাতরাইয়া বাজার থেকে মুড়ি কিনে আনছি।
স্থানীয় আরিফ মন্ডল বলেন, আমাদের এলাকায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর আমন ধানের ক্ষেত। পুকুর ডুকে চলে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। রাত থেকে বাড়ি-ঘরে পানি থাকায় না খেয়ে আছে লোকজন। আমাদের বন্যা কবলিত এলাকায় প্রচুর ত্রাণ প্রয়োজন। দ্রুত ত্রাণ দেওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানাই।
গামারীতলা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বলেন, কলসিন্দুরসহ বিভিন্ন পয়েন্ট নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, ‘আমি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছি। ত্রাণ কার্যক্রম আজকের মধ্যে শুরু করার চেষ্টা করছি। প্রক্রিয়া চলছে।
ময়মনসিংহ আবহাওয়া ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে রবিবার আবহাওয়া কেমন থাকবে তা কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হবে।