Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

পৌষ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ময়মনসিংহে নতুন করে প্লাবিত আরো ৫০ গ্রাম :খাদ্য সংকট চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ৮ অক্টোবর ২০২৪

প্রিন্ট:

ময়মনসিংহে নতুন করে প্লাবিত আরো ৫০ গ্রাম :খাদ্য সংকট চরমে

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

অতিবৃষ্টি, ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল মুষলধারে বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষিতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরো ৫০টি গ্রাম। বর্তমানে তিন উপজেলার ২৩ টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছে। খাদ্যসঙ্কটে দুর্গত মানুষ কষ্টে রয়েছেন। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা হালুয়াঘাট ও দুবাউড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রাণ বিতরণ করেছে এছাড়াও বিএনপি এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে প্রাণ বিতরণ করছেন। 

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুর্ণবাসন কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন জানান, বন্যা কবলিত উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে নারী ও শিশুসহ দুই সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তিন উপজেলায় ৬৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি রান্না করা খাবারও দেয়া হচ্ছে। 

ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও, দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, বাঘবেড়সহ সাতটি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে ঘোষগাঁও ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামে নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে জনদুর্ভোগ এখন চরমে। জমির ফসল ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিবন্দী মানুষ গৃহপালিত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ধোবাউড়া  উপজেলার উত্তরাঞ্চলে পানি কিছুটা কমলেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে পানি বেড়েছে। ২৬টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারদিনের টানা দুর্ভোগে দিশেহারা মানুষ। 

হালুয়াঘাট উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় হালুয়াঘাটের পাঁচটি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উজানের পানি কমে যাওয়ায় ভূবনকুড়া, জুগলী, গাজিরভিটা, সদর ও পৌরসভার পানি নেমে গেছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহমেদ জানান, উপজেলার উজান দিকে প্লাবিত হওয়া গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে। নড়াইল, কৈচাপুর, ধুরাইল এবং আমতৈল ইউনিয়নের পানি ফুলপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলেও সার্বিক পরিস্থিতি এখন ভালো।

ফুলপুর উপজেলায় প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, সিংহেশ্বর ও ফুলপুর ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। এছাড়া ফুলপুর সদর, রূপসী, বালিয়া, বওলা, ভাইটকান্দি ও রামভদ্রপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জমির আমন ফসল ও সবজি বিনষ্ট হয়েছে। পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম জানান, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

ফুলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, বন্যায় আমন ধানের চার হাজার ৪৪০ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছে এবং ১৪৫ হেক্টর সবজি খেত নিমজ্জিত হয়েছে।

এদিকে াসোমবার (৭ অক্টোবর) সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড এর তত্ত্বাবধানে ৪০৩ ব্যাটেল গ্রুপের অধীনস্ত ইউনিট ২১ ইবি কর্তৃক ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলার মোট ০৯ টি ইউনিয়নের বন্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্য এবং ত্রাণ বিতরণ সম্পাদন করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, গত দুই দিনে ২১ ইবি কর্তৃক সারাদিনব্যাপী উদ্ধার কার্যক্রম অভিযান সম্পন্ন করা হয়েছে। উক্ত উদ্ধার কার্যক্রমে দুইটি উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের অসংখ্য পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় সেনাবাহিনী উদ্ধার দল। এছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহের নিকট ত্রাণ পৌঁছানোর কাজ চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই উদ্ধার কার্যক্রম এবং ত্রাণ বিতরণ জারি থাকবে।

সোমবার দুপুরে উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের রাউতি ও বতিহালা গ্রামে এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়।লেফটেন্যান্ট কর্নেল লেনিনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে এই ত্রাণ বিতরণ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, এর আগে হালুয়াঘাট উপজেলার ধুরাইল ও কৈচাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পানিবন্দি নারী ও শিশুদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার ধোবাউড়া উপজেলার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। আগামীকালও দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান থাকবে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer